যুক্তরাষ্ট্র উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর

৩০ ডিসেম্বরের পর যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা পাবেনা বাংলাদেশ

৩০ ডিসেম্বরের পর যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধা পাবেনা বাংলাদেশ

৩০ শে ডিসেম্বরের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি থাকছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি।

বুধবার রাতে সফররত যুক্তরাষ্ট্র উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগানের সঙ্গে বৈঠক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

শাহরিয়ার বলেন, ৩০ শে ডিসেম্বরের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি থাকছে না। হয়তো নতুন কোন ম্যাকানিজম আসবে।

বিগানের সঙ্গে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান শাহরিয়ার আলম বলেন, এনার্জি, বিশেষ করে গ্যাস ক্ষেত্র- অনসোর এবং অপসোরে অনুসন্ধানে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নিয়ে কথা বলেছি। সমুদ্র সীমা নির্ধারণের পর আমরা ২০টির অধিক ব্লকে বিভক্ত করেছি। যেখানে দু’একটি কোম্পানীকে এনগেজ করেছি। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন এনার্জি বিডিং অপেন বা উন্মুক্ত হয়।

তবে অতীতেও সরকারী ক্ষেত্রে ডিরেক্ট নেগোসিয়েশন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কোন ভাল কোম্পানী পাওয়া গেলে নিশ্চিয়ই সরকার ডিরেক্ট নেগোসিয়েশনের বিষয়টি বিবেচনা করবে, এটা হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র এ খাতে অংশ নিতে আগ্রহী হলেও তারা তাদের কোন কোম্পানীর নাম প্রস্তাব করেনি। প্রতিমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের এলএনজি সাপ্লাই শুরুর বিষয়টি স্মরণ করে সামনের দিনে এটি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করেন।

ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট চায় যুক্তরাষ্ট্র

বৈঠক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টে আগ্রহ দেখিয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রশ্নে তারা ‘বেল্ট অ্যাক্ট’ এর আওতায় কিছু দেশটি প্রিফারেনশিয়াল সুবিধা দিচ্ছে। বাংলাদেশও ওই বাণিজ্য সুবিধা চায়, যার আওতায় শুল্কমুক্তি হতে পারে। ঢাকা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্তির ওই সুবিধা পেলে বাংলাদেশের কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যাদেরকে তারা ওই বিশেষ সুবিধা দিয়েছে বা দিচ্ছে তাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বাণিজ্যর আকার অনেক বড়। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের আকার বাড়লে তারা এটি বিবেচনা করতে পারে। সেই প্রেক্ষাপটেই যুক্তরাষ্ট্র ঢাকার সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টকে উৎসাহিত করেছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৩০ শে ডিসেম্বরের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি থাকছে না। হয়তো নতুন কোন ম্যাকানিজম আসবে। আমরা আশা করি সেই বাণিজ্য সুবিধা পাবো। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাট, জাহাজ, আইসিটি, লেদার এবং আইটি রিলেটেড প্রোডাক্ট রপ্তানীর সূযোগ রয়েছে।

রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২২ শে অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও ৩ বন্ধু রাষ্ট্রের আয়োজনে একটি ভার্চ্যুয়াল আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে। এটাতে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা হবে। এতে বাংলাদেশও আমন্ত্রিত। এ বিষয়ে আলোচনায় বলা হয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য লং টার্মে মানবিক সহায়তার পরিকল্পনা করা হোক এটা বাংলাদেশ চায় না। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন। ওই ওয়েবিনারে প্রত্যাবাসনে জোর দিতে হবে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী আমাদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং মিয়ানমার উভয় দেশেই নভেম্বরে নির্বাচন। ওই নির্বাচনের পর ওয়াশিংটনের নতুন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মিয়ানমারের নতুন সরকারের সঙ্গে রাখাইনে মানবতা বিরোধী অপরাধ বন্ধ করতে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা জোরদার করবে। দেশটির ওপর অতীতে অবরোধ আরোপ করার প্রসঙ্গও স্মরণ করেছেন উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী।

ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি

প্রতিমন্ত্রী দাবি করেন বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কোন আলোচনা হয়নি। তবে বাংলাদেশ এর সঙ্গে আছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, উভয়ের বেনিফিট হয় এমন একটি ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশের কোন আপত্তি নেই। ইন্দো-প্যাসিফিকে জয়েন্ট করারও কোন বিষয় নেই। এটা এমন একটা স্ট্র্যাটেজি, যার প্যারালাল আরও কিছু উদ্যোগ আছে। বাংলাদেশ কখনও এগুলোকে সাংঘর্ষিক মনে করে না। বৈঠকে প্রতিরক্ষা সামগ্রী ক্রয় বিক্রয় নিয়ে কোন কথা হয়নি বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

করোনা ভ্যাকসিন

প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের করোনা ভ্যাকসিনের ব্যাপক উৎপাদনে হয়তো আরও সময় লাগবে। তবে যখনই এটি বাজারজাত করা হবে তা যেনো বাংলাদেশ কিনতে পারে সেটি ফ্যাসিলিটেড করবে যুক্তরাষ্ট্র স্টেট ডিপার্টমেন্ট। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা জটিলতা নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আই-২০ ফরম প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ভিসার জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান ট্রাম্প এডমিনিস্ট্রেশনের আমলে এটাই সর্বোচ্চ সফর। ঘন্টাব্যাপী তাদের কথা হয়েছে, আরও কথা হবে। বৈঠকে কোভিডকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনীতি ব্যবস্থাপনা এবং তার নেতৃত্বকে সাধুবাদ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দু’দিনের এক তাৎপর্যপূর্ণ সফরে যুক্তরাষ্ট্র উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগান বুধবার বিকালে স্পেশাল ফ্লাইটে দিল্লি হয়ে ঢাকা পৌঁছান। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বিমানবন্দরে অতিথিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠক হবে যুক্তরাষ্ট্র উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রীর। ওই বৈঠকের পর মোমেন-বিগান যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেবেন। মূলত সেই ব্রিফিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার বিষয়ে জানানো হবে। দুপুরে বিগান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

ওই দিনে রাজধানীর একটি হাসপাতালও পরিদর্শন করতে পারেন তিনি। সরকারী কর্মসূচী ছাড়াও গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ, শ্রম খাতের প্রতিনিধি, এনজিও ব্যক্তিত্বসহ অন্যদের সঙ্গেও তার একান্ত আলাপ এবং মতবিনিময়ের আয়োজন রয়েছে।