ডাকাতি করতে পুরো বাস ভাড়া

ডাকাতি করতে পুরো বাস ভাড়া

রাজধানীতে একটি ডাকাত দলের ২০-২২ জন সদস্য মিলে একটি বাস ভাড়া করে। যাত্রী সেজে তারাই বাসে বসে থাকে। পরে সাধারণ মানুষ সেই বাসে উঠলে ধরপাকড় করে তাদের কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেয় তারা। এমনই এক ডাকাত দলের হাতে সাভার থেকে মিরপুর আসার সময় খুন হন হোটেল ব্যবসায়ী লস্কর রবিউল ইসলাম। পরে রবিউলের মরদেহ বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের পাশে ফেলে দেয় ডাকতরা। বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৫ অক্টোবর রাতে এ ঘটনা ঘটে। পরে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় ডাকত দলের প্রধান পটুয়াখালীর বসির মোল্লাসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো—মো. বসির মোল্লা (৪২), শেখ হাফিজ (৩৫), মো. আনোয়ার হোসেন (৩৫), মো. আমির হোসেন (২৮), মো. আল আমিন (২৮), জুয়েল (৩২), মো. নঈম (২২), তপন (২৮) ও নাজমুল (৩০)।

ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘গত ২০ বছর ধরে বসির ডাকাতি করছে। আশুলিয়ায় একটি মামলায় ২৬ মাস জেল খাটার পর তিন মাস আগে ছাড়া পেয়ে অভিনব পদ্ধতিতে ডাকাতি শুরু করে। পুরো বাস কয়েকদিনের জন্য ভাড়া নেয় বসির। এরপর তার দলের চার জন সদস্যকে ডেকে পাঠায়। তারা প্রত্যকে আরও তিন চার জন করে নিয়ে আসে। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, নিজেদের ২০-২২ জন সদস্যকে বাসে নিয়ে যাত্রা শুরু করে। অনেক যাত্রী দেখে সাধারণত যাত্রীরা বাসে উঠেন। বাসে ওঠার পর তাদের সর্বস্ব কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর যাত্রীকে সুবিধামতো জায়গায় নামিয়ে দেয় তারা।’

তিনি বলেন, ‘গত ৪ অক্টোবর ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে নিরালা পরিবহনের একটি বাস তিন দিনের জন্য ভাড়া করে ডাকাত দলের প্রধান বসির। বাসটি ভাড়া নেওয়ার পর নিরালা পরিবহনের স্টিকার তুলে ঢাকা-দৌলদিয়া-খুলনা লিখে ডাকাত দলের অন্য সদস্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে রওনা হয় বসির। গরু ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনকে ডাকাতি করে দৌলদিয়ায় রাতভর অবস্থান করে। পরদিন ৫ অক্টোবর দৌলদিয়া থেকে ফেরার পথে লস্কর রবিউল ইসলামকে বাসে তুলে তারা।’

পিবিআই প্রধান বলেন, ‘রাত ১০টার দিকে নবীনগর থেকে রবিউলকে বাসে তোলা হয়। বাসে ওঠার পর ডাকাতির সময় তিনি বাধা দেন। ডাকাত দলের সদস্যরা কয়েকজন রবিউলকে চেপে ধরে, কাপড় দিয়ে মুখ বাঁধে। এতেও কাজ না হওয়ায় ডাকাত দলের নেতা বসির তার হাতে থাকা হুইল রেঞ্জ দিয়ে রবিউলকে আঘাত করে। এতে বাসের মধ্যেই মারা যান রবিউল। এরপর নির্জন স্থান দেখে রবিউলের মরদেহ বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের পাশে ফেলে চলে যায় ডাকাতরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাসায় ফিরতে বিলম্ব হচ্ছিল দেখে রাত ১২টার দিকে রবিউলের নম্বরে তার মা কল করেন। অপরপ্রান্ত থেকে এক অপরিচিত ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে জানান, এই নম্বরের মালিক খুন হয়েছেন। তার মরদেহ হেমায়েতপুরে রাখা হবে। এই বলে কল কেটে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর রবিউলের মোবাইল ফোনটি ভেঙে ড্রেনে ফেলে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা।’

৬ অক্টোবর রবিউলের মরদেহ উদ্ধারের পর অজ্ঞাত হিসেবে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। খবর পেয়ে রবিউলের পরিবার মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।

পরে এ হত্যার ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তদন্ত করেন উপপরিদর্শক মো. সালে ইমরান ও তার দলের সদস্যরা। গোয়েন্দা তৎপরতা ও প্রযুক্তির সহায়তায় ১৩ অক্টোবর ডাকাত দলের প্রধান বসিরকে সাভার থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এসআই সালে ইমরান জানান, ১৪ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় বসির। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাভার, ধামরাই, ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে জড়িত আরও ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত আরও বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।