নড়াইলে ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, ১৪৪ ধারা জারি

নড়াইলে ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, ১৪৪ ধারা জারি

নড়াইলের কালিয়া উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ একই সময় পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকায় পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।

মঙ্গলবার সকালে থেকে কালিয়া পৌর শহরের ডাকবাংলো, কলেজ রোড এবং পার্শ্ববর্তী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকার কারণে উপজেলা প্রশাসন মঙ্গলবার সকালে মাইকিংয়ের মাধ্যমে বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কালিয়া পৌরসভায় সব ধরনের মিছিল-সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে মর্মে ১৪৪ ধারা জারি করে।

জানা যায়, নড়াইলের কালিয়া উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের দুটি কমিটি গঠিত হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের অনুমোদিত কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেরাই পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছেন নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তি সমর্থিত পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ।

উভয়পক্ষ মঙ্গলবার পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকে। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উত্তেজনা। পরিস্থিতি সামাল দিকে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে।

এদিকে মঙ্গলবার পূর্বনির্ধারিত তারিখে কালিয়া পৌর শহরের ডাকবাংলোয় নবনির্বাচিত উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটির নেতৃবৃন্দদের উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গণসংবর্ধনা, পরিচিতি সভা ও আনন্দ মিছিল করার আয়োজন করা হয়।

অপরদিকে এমপি মুক্তির পক্ষের পদবঞ্চিতদের পাল্টা কমিটির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে একই সময়ে পৌর শহরের ভিন্ন স্থানে একই কর্মসূচির ডাক দেয়। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটি নিয়ে নড়াইল-১ আসনের রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। ছাত্রলীগের দুপক্ষই কালিয়া পৌর শহরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। ফলে যে কোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা।

জেলা ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, গত ২২ অক্টোবর প্রায় আট বছর পর কালিয়া উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের নতুন আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এফএম সোহাগকে কালিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও রাইসুল ইসলাম পান্নুকে সাধারণ সম্পাদক এবং পৌর ছাত্রলীগের এমএম তানবীরুল ইসলামকে সভাপতি, প্রশান্ত কুমার দাসকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

নবনির্বাচিত এ কমিটি দুটির নেতৃবৃন্দ নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফি বিন মুর্তজার এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলু খানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

অন্যদিকে পদবঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতা ইয়ামিন বিশ্বাস ও মহিবুল হক অনিকের নেতৃত্বে একটি অংশ এমপি মুক্তির অনুসারী।

গত ২৩ অক্টোবর অনুমোদিত কমিটিকে ছাত্রলীগের এমপি মুক্তির পক্ষের অনুসারীরা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে কালিয়া পৌর শহরে একটি মিছিল করে। এ সময় কালিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি ইব্রাহিম শেখ পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন।

অনুমোদনবিহীন তার ঘোষিত কমিটিতে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়ামিন বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক মহিবুল হক অনিক, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়ামত হোসেন প্রান্ত ও সাধারণ সম্পাদক রাইসুল ইসলাম হৃদয়কে মনোনীত করা হয়। তাদের ওই দিন এমপি করিরুল হক মুক্তি ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন।

কালিয়া ছাত্রলীগের এ পাল্টাপাল্টি কমিটি নিয়ে শহরে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ছাত্রলীগের সভাপতি চঞ্চল শাহরিয়ার মীম জানান, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা ছাত্রলীগ ছাড়া বিদায়ী কালিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বা স্থানীয় এমপির কোনো কমিটি ঘোষণা বা অনুমোদন দেয়ার এখতিয়ারই নেই। তাই বিতর্কিত পদবঞ্চিতদের নিয়ে যে কমিটি করা হয়েছে, সেটি অবৈধ ও হাস্যকর।

কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কৃষ্ণপদ ঘোষ বলেন, জেলা ছাত্রলীগ কালিয়া উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের সময়োপযোগী এবং গ্রহণযোগ্য কমিটি ঘোষণা করেছে। এটি বৈধ কমিটি।

এমপি কবিরুল হক মুক্তি এবং উপজেলা ছাত্রলীগের প্রায় আট বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির সভাপতি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইব্রাহিম শেখ করে মাদক মামলার আসামি, সাজাপ্রাপ্ত ও বিবাহিত পদবঞ্চিত কয়েকজনকে ব্যবহার করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন তথা আগের ন্যায় সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ড করছেন।

এ বিষয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুল হুদা বলেন, উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘাত এড়ানোর জন্য এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাধ্য হয়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তার পরও প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় থাকবে।

এ প্রসঙ্গে নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তির (০১৭১১১৯২৬৩৭) অভিমত বা বক্তব্য জানার জন্য সকালে মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এমজে/