অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঢাবির অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঢাবির অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা

তামিম আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে পুলিশ অফিসার হতে চান। কিন্তু চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি কবে শেষ করতে পারবেন তা নিশ্চিত না হওয়ায় অনিশ্চয়তা এখন তার ভবিষ্যতের পথকে মেঘলা করে দিচ্ছে। করোনা মহামারিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্লাস-পরীক্ষা না নেয়ায় বড় ধরনের সেশন জটের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তামিম বলেন, ‘আমি আমার ভবিষ্যত নিয়ে সত্যিই উদ্বিগ্ন। আমি যখন স্নাতকোত্তর শেষ করব তখন পুলিশের চাকরির বয়সসীমা শেষ হয়ে যেতে পারে। আমার বাবা-মাও আমার ভবিষ্যতের বিষয়েও সমানভাবে উদ্বিগ্ন। আমার স্বপ্নগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।’

আসলে ঢাকা কলেজের ইসলামিক ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তামিম একা নন। করোনা মহামারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাতটি কলেজের প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের সমস্যা সম্পর্কে উদাসীন। এখনও পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ তাদের উদ্বেগ নিরসনে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ শিক্ষার্থীদের একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা হয়েছে যে তাদের পরীক্ষার ফলাফল এখনও প্রকাশ করা হয়নি। প্রায় ৯ মাস আগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরিচালনায় ব্যর্থতার জন্য কর্তৃপক্ষের নিন্দাও জানিয়েছে।

ঢাকা কলেজের উদ্ভিদ বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি এখনও আমার পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছি। আমি মার্কশিট বা প্রশংসাপত্র ছাড়া চাকরির জন্য আবেদন করতে পারব না। মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে উদাসীন।’

ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী তৌকীর আহমেদও একই রকম অনুভূতি প্রকাশ করেন। ‘আমরা একটি সেশন জটে আটকা পড়েছি। আমাদের উদ্বেগ কমাতে কর্তৃপক্ষকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।’

সরকারি তিতুমীর কলেজের সালাউদ্দিন রিয়াদেরও একই রকম গল্প রয়েছে। ‘সাত বছরেও আমি আমার পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি। এই বছর কোভিড আমাদের একাডেমিক ক্যালেন্ডার ব্যাহত করেছে, কর্তৃপক্ষ কি এটা শুনছে?’

ইউএনবির সূত্র অনুযায়ী, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাডেমিক কার্যক্রম ঠিক রাখতে পূর্ববর্তী পরীক্ষা না নিয়েই নতুন সেশনের ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০ অক্টোবর ঢাবির অধিভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষদের সাথে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঢাবি রাজি হলে আমরা আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য ক্লাস শুরু করব .. কয়েকটি কোর্সের ফলাফল আগামী সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশিত হতে পারে। একাডেমিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে অনলাইন ক্লাস শুরু করা হবে।’

কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম উল্লাহ খন্দকার অবশ্য শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ সম্পর্কে একমত হলেও তিনি বলছেন যে তারা এখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি। ‘আমরা তখনই সকল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব যখন ঢাবি আমাদের জানাবে।’

২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ সালের একাডেমিক সেশনের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, প্রায় ২৭ মাস ধরে একই সেশনে আটকে রয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী এমনকি তাদের দাবি আদায়ের জন্য অনির্দিষ্টকালের আন্দোলন শুরু করার কথাও ভাবছে।

ইতোমধ্যে এই শিক্ষার্থীরা সেশন জট বন্ধের দাবিতে গত তিন মাসে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ করেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পর এই বিক্ষোভগুলো থেকে তারা সরে দাঁড়ায়।

কিছু শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে এই সাতটি কলেজের অন্তর্ভুক্তি বাতিলের পক্ষেও রয়েছে।

শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০১৭ সালে রাজধানীর সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর শিক্ষার্থীরা অন্তর্ভুক্তি বাতিলের দাবিতে বেশ কয়েকবার রাস্তায়ও নেমেছে।

অনুমোদিত কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।

ঢাবির ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করেছেন যে অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা সেশন জটের মুখোমুখি হয়েছে। ‘তবে যারা ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছে এবং ঢাবির অধিভুক্ত হয়েছে তারা এই জাতীয় কোনো সমস্যার মুখোমুখি হবে না।’

এমজে/