করোনার আতঙ্ক না কাটতেই বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুর যন্ত্রণা

করোনার আতঙ্ক না কাটতেই বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুর যন্ত্রণা

করোনারভাইরাসের আতঙ্ক না কাটতেই বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুর যন্ত্রণা। গতকাল বৃহস্পতিবার একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯ জন। গত সাত দিনে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১২৬ জন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশে হাসপাতালে ভর্তি আছে ৯৩ জন। কেবল রাজধানী শহরেই বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসাধীন আছে ৮৮ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জিন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কনট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা: মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়া জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৮১১ জন। হাসপাতালে চিকিৎসার পর ৭১৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এর মধ্যে পাঁচজন ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যু হলেও আইইডিসিআর দু’টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে একজনের মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে।

কনট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, গত ৫ নভেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত বেড়ে চলেছে। মাঝখানে ৯ নভেম্বর একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা কম ছিল। সেদিন সারা দেশে মাত্র ছয়জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়। ৫ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত দৈনিক যথাক্রমে ১০ জন, ১২ জন ও ১৫ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। ৮ নভেম্বর ২৪ জন, ৯ নভেম্বর ৬ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে।

এরপর ১০ থেকে গতকাল ১২ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনে সারা দেশে যথাক্রমে ২৫ জন, ২৫ ও ১৯ জন আক্রান্ত হয়েছে ডেঙ্গুতে। এ হিসাব কেবল স্বাস্থ্য অধিদফতরে রিপোর্ট করে এমন হাসপাতাল থেকে নেয়া। এর বাইরে আরো অনেক হাসপাতাল রয়েছে। এরা স্বাস্থ্য অধিদফতরকে ডেঙ্গু বিষয়ে কোনো রিপোর্ট করে না। এ ছাড়া রয়েছে চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। সব হাসপাতাল ও চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের এক করা হলে দেখা যাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এখনকার চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

গত অক্টোবর ও নভেম্বরে প্রথম দিকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশার বিস্তার ঘটেছে। চলতি নভেম্বর মাসেও এর প্রভাব থাকার আশঙ্কা রয়েছে। চলতি মাসেও বঙ্গোসাগরে নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড় হওয়ার মতো অবস্থা হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। এ মাসে প্রতিবছরই বঙ্গোপসাগরে কমপক্ষে একটি নিম্ন চাপ হয়ে থাকে। তা থেকে সব সময় ঝড় না হলেও নি¤œচাপের কারণে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এ মাসেও এসব কারণে বৃষ্টিপাত হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে ডেঙ্গুর প্রভাব চলতি নভেম্বর পর্যন্ত থাকবেই আগামী ডিসেম্বরেও এডিস মশার বিস্তার বন্ধ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এর মধ্যেই প্রতিদিনই ঢাকার সর্বত্র একযোগে মশার লার্ভা ধ্বংস ও উড়ন্ত মশা মারার অভিযান না থাকলে করোনার বিপদের মধ্যে নতুন করে ডেঙ্গুর বিপদ মানুষকে বিহ্বল করে রাখবে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের আতঙ্কে আছে রাজধানীবাসী। এর মধ্যে ডেঙ্গু এসে নতুন করে আক্রান্ত করলে হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়বে। নিধন অভিযান জোরদার করে মশা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারলে যেমন নাগরিক অসন্তুষ্টি কমবে তেমনি সরকারকে নতুন করে চাপে পড়তে হবে না।

এমজে/