ফের বাড়লো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি, বাড়ছে হতাশা

ফের বাড়লো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি, বাড়ছে হতাশা

বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন মেয়াদে বাড়ানো হয়েছে ছুটি। বাতিল হয়েছে পিইসি, জেএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ইতিমধ্যে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্র্থীরা। ১৭ই মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই ছুটি কয়েক ধাপে বাড়িয়ে তা করা হয়েছে ১৯শে ডিসেম্বর পর্যন্ত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তাভাবনার কথা বলা হলেও ১৪ই নভেম্বর পর্যন্ত চলমান ছুটি বাড়ানো হয়েছে নতুন করে। দেশে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোনো না কোনোভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবস্থায় মানসিকসহ কিছু ক্ষতির কারণ হলেও সার্বিক বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানের ছুটি বড় ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষায় ভূমিকা রাখছে।

প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে। শহরের শিক্ষার্থীরা অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হলেও শতভাগ না। আর টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইলের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমেও যুক্ত হতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্ট ডিভাইস নেই। আর এ থেকে অনুমেয় ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারীদের সংখ্যা আরো অনেক কম। ব্র্যাকের এক জরিপে দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলে মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনে পাঠদানে অংশ নিতে পারছেন। আর অনলাইনে ক্লাসে যুক্ত মাত্র ১ শতাংশ শিক্ষার্থী।

এদিকে কিন্ডারগার্টেনগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। গত মঙ্গলবার কিন্ডারগার্টেন খুলে দেয়া ও আর্থিক সহযোগিতার আহ্বান জানান তারা।
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান বলেন, করোনাকালে যখন বাচ্চারা দীর্ঘসময় ঘরে বন্দি তখন তাদের মেজাজ এমনিতেই খারাপ অবস্থায় রয়েছে। একটা শিশু বাবা-মায়ের সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারে না। তার সমবয়সী কারো প্রয়োজন। সেখানে দীর্ঘ সময় ক্লাস করতে হচ্ছে। এটা শিক্ষা হতে পারে না। আমরা এর মাধ্যমে শিশুর সৃজনশীলতা নষ্ট করে দিচ্ছি।

মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণের ঘোষণা দেয়া হয়। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের মান যাচাইয়ে নেয়া হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্ট। কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিযোগ পাওয়া যায় এই অ্যাসাইনমেন্টের জন্য নেয়া হচ্ছে অর্থ। এছাড়াও বিভিন্ন দোকানে মিলছে উত্তরপত্র। যদিও বলা হয়েছে এটির মূল্যায়ন পরবর্তী ক্লাসের জন্য প্রযোজ্য নয়। এই অ্যাসাইনমেন্ট কেন্দ্রিক দুর্নীতি রুখতে ইতিমধ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

দেশের বিভিন্ন এলাকার জেলা শহরের বাইরের ৬ জন মাধ্যমিক পর্যায়ের ও ৪ জন মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীকেই শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। আর্থিক ক্ষতির কারণে কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। যেসব মেয়ে শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকলে হয়তো তারা পড়ালেখার সঙ্গে যুক্ত হতে পারতো। তারা প্রত্যেকে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর একাংশ শিক্ষার্থী আর বসবে না বেঞ্চে। আবার করোনার পরে উত্তরাঞ্চলের বন্যার কবলেও ক্ষতির মুখে পড়েছে অনেক শিক্ষার্থী।

করোনার প্রভাবে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মাত্র আড়াই মাস ক্লাস করতে পেরেছে। তারা ইতিমধ্যে এইচএসসি’র পরীক্ষার্থীদের মতো ‘অটোপাস’র দাবি জানিয়ে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে।

এমজে/