'বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা ও গুম ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে ফ্যাসিবাদী সরকার'

'বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা ও গুম ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে ফ্যাসিবাদী সরকার'

বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্রক্ষমতাকে চিরকাল কুক্ষিগত রাখতে দেশব্যাপী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে হত্যা, বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা ও গুম করার মাধ্যমে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। দেশ যেন এখন এক মৃত্যু উপত্যকা ও গুমের রাজ্যে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।

তিনি বলেন, নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য ও এক ব্যক্তির শাসন কায়েম করতে বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে তাদেরকে কারান্তরীণ করার পাশাপাশি গুম-খুনের নেশায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বর্তমান জোরজবরদস্তির অনৈতিক সরকার।

গত ১৩ নভেম্বর ২০২০ ফার্মগেটের খামারবাড়ী থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান এবং পল্টন এলাকা থেকে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজ করা হয়েছে, কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে আটকের বিষয়টি স্বীকার করছে না। তাদেরকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা গুম করা হয়েছে এই আশঙ্কায় দলের নেতাকর্মীসহ তাদের পরিবার-পরিজন গভীর উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন।

আমরা নিশ্চিত যে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই মোস্তাফিজুর রহমান এবং মিজানুর রহমান মিজানকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। বর্তমান সরকার বিএনপি-কে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে গুমের মতো নিষ্ঠুর অপকর্ম করে বিএনপি’র নেতাকর্মীদেরকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চাচ্ছে। বিগত ১২ বছরে সরকার তাদের বিভিন্ন অনুগত বাহিনী বা এজেন্সি দ্বারা বিএনপি’র ৫ শতাধিক নেতাকর্মী ছাড়াও ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক, লেখক, পরিবেশবাদী কর্মী, ব্যবসায়ী ও মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী ব্যক্তিদেরকেও গুম করেছে। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সরকারের গুমের বিষয়ে গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যা দেশী-বিদেশী বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন সিনেটর সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশে আওয়ামী সরকারের নির্দেশে র‌্যাব কর্তৃক ৪ শতাধিক মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা, গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহবান জানিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের মান-মর্যাদা ধুলিস্যাৎ হয়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। তার পরেও সরকার গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন করার সংস্কৃতি থেকে বিরত থাকছে না।

তিনি আরো বলেন, আমরা অবিলম্বে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান এবং হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানকে জনসম্মুখে হাজির করার জোর আহবান জানাচ্ছি। নচেৎ তাদেরকে নিয়ে অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।

এছাড়া চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের ৪নং মুরাদপুর ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক জামশেদ উদ্দীনকে গত ১১ নভেম্বর ২০২০ তারিখে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়। গত ১৪ নভেম্বর তার বস্তাবন্দী লাশ সীতাকুন্ড সাগর পাড়ে পাওয়া যায়। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ইউনিয়ন যুবদল নেতা জামশেদ উদ্দীনকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করার ঘটনায় আমি বিএনপি’র পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

গত ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নজীরবিহীন ভোট ডাকাতি, জালিয়াতি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রহসনের নির্বাচন সম্পন্ন হবার পর নির্বাচন থেকে জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই ঢাকায় কয়েকটি গণপরিবহনে আগুন লাগিয়ে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৫ শতাধিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বানোয়াট ও হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, মামলার এজাহারে বাদী হিসেবে যার নাম রয়েছে তিনি মামলা দায়ের করেননি বলে জানিয়েছেন। এসব মিথ্যা মামলায় করোনাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল বা বাসায় কোয়ারেন্টাইন বা চিকিৎসাধীন থাকা নেতাকর্মী, পঙ্গুত্ব বরণকারী নেতাকর্মী, রাজনৈতিক-সাংগঠনিক বা ব্যবসায়িক কাজে ঐদিন ঢাকার বাইরে অবস্থান করা নেতাকর্মী, স্থায়ীভাবে ঢাকার বাইরের অঞ্চলে বসবাসরত নেতাকর্মীদেরকেও জড়ানো হয়েছে, তাতে প্রমানিত হয়েছে-সরকার অতীতের মতো এখনও প্রতিহিংসা ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে হয়রানী করতে বদ্ধপরিকর। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদ উপনির্বাচনের পর থেকে বেপরোয়াভাবে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে পুলিশী তল্লাশী অভিযান চলমান রাখা হয়েছে। এমনকি রাজধানীর বাইরেও বিভিন্ন অঞ্চলেও একই কায়দায় নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার অভিযান চলছে। নেতাকর্মীদের বাসায় না পেয়ে বাসার সদস্যদের সাথে পুলিশ অসৌজন্যমূলক আচরণ করছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ গণপরিবহনে অগ্নিসংযোগের দায়-দায়িত্ব উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপি’র ওপর চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই-বিএনপি সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ^াস করে না, বরং জনগণকে আগুণে পোড়ানোর সংস্কৃতির সাথে আওয়ামী লীগই জড়িত।

গতরাতে উত্তরা-পশ্চিম থানা বিএনপি’র নেতা মিলনকে বাসা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নেতাকর্মীদের বাড়ীতে বাড়ীতে পুলিশী অভিযানের বিরুদ্ধে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এধরণের কর্মকান্ড থেকে সরে আসার আহবান জানাচ্ছি।

এমজে/