এমপি এনামুলের ২য় স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন

‘১৫ পিপি ও সরকারদলীয় সব আইনজীবী আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে’

‘১৫ পিপি ও সরকারদলীয় সব আইনজীবী আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে’

রাজশাহী-৪ আসনের সাংসদ এনামুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তার ওরফে লিজা (৩০) সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি এই মামলাকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক বলে দাবি করেছেন। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় রাজশাহী নগরের নিউমার্কেট এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে গত ৫ জুন সাংসদের ব্যক্তিগত সহকারী ও বাগমারা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মামলাটি করেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এ মামলায় এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগ আনা হয়। তবে এর আগে ওই নারী তাঁকে মামলায় ফাঁসানো হতে পারে বলে আশঙ্কা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন।

আয়েশা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগ করা হয়, সাংসদ এনামুল হকের কাছ থেকে ঋণের এক কোটি টাকা পরিশোধের জন্য চাঁদা দাবি করেন আয়েশা আক্তার। চাঁদার টাকা না দিলে তাঁর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা চালাবেন বলেও হুমকি দিয়েছিলেন। পরে চাঁদা না দেওয়ায় সাংসদের বিরুদ্ধে তিনি অপপ্রচার চালান। এতে সাংসদের মানহানি হয়েছে।

সাংসদ এনামুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগএই মামলায় আয়েশা আক্তার উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) তাঁর জামিনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আজ তিনি নিম্ন আদালতে জামিনের জন্য যান।

সংবাদ সম্মেলনে আয়েশা আক্তার দাবি করেন, সাংসদের পক্ষের আইনজীবীদের কারণে তিনি আদালতে জামিন আবেদন জমাই দিতে পারেননি। ১৫ জন পিপি ও সরকারদলীয় সব আইনজীবী তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তিনি যেন ২০টা খুন করে আদালতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দলীয় কোনো ব্যক্তি নই। আর সাংসদ এনামুল একজন দলীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। আমি একটা সাধারণ মেয়ে। আমার বাবা নেই, ভাই নেই, বোন নেই। বৃদ্ধ মা ছাড়া কেউ নেই। আজ আদালতে একাই গিয়েছিলাম। আমি কীভাবে একজন “রানিং” সাংসদের কাছে চাঁদা দাবি করতে পারি?’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘এটা কীভাবে সম্ভব? আর যদি করেই থাকি, তাহলে সাংসদের উচিত ছিল তাঁর লোকবল দিয়ে আমাকে পুলিশে দেওয়া। সেটা তিনি কেন করেননি? এখানে একজন বিচারকও বুঝতে পারেন যে মামলাটি মিথ্যা। আমি কি আমার স্বামীর সঙ্গে ফেসবুকে ছবি দিয়ে বলতে পারি না যে আমি তাঁর স্ত্রী। এটা কি আমার অন্যায়? এতে কীভাবে সাংসদের সম্মানহানি হয়, আমি বুঝতে পারি না।’

আয়েশা আক্তার দাবি করেন, সম্মানহানির জন্য তিনি কোনো কথা বলেননি। তিনি সাংসদের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, কেন তাঁর নামে মিথ্যা মামলা করা হলো। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে মিথ্যা মামলা করেছেন।

আয়েশা আক্তার বলেন, ‘অথচ ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে আমিই সাংসদ এনামুলের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়েছিলাম। পুলিশ সেই মামলা নেয়নি।’ তিনি দাবি করেন, তিনি সাংসদকে তালাক দেননি। তিনিও সাংসদের কাছ থেকে এখনো তালাকনামা পাননি। অথচ তিনি তালাকপ্রাপ্ত প্রচার করা হয়েছে। তিনি একাধিকবার সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়েছিলেন। থানা ও আদালত কেউ তাঁর মামলা নেয়নি। নারী নির্যাতন মামলা করতে গিয়েছিলেন, সেই মামলাও নেয়নি।

আয়েশা বলেন, পাঁচ মাস পলাতক থেকে এক মাস আগে তিনি জামিন নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার আদালতে দাঁড়িয়ে জামিন নিতে না পারলে তাঁকে হাজতে যেতে হবে। নয়তো আবার পলাতক জীবনে ফিরে যেতে হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের জন্য অনেক করেছেন। তিনি যেন তাঁকে এই মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। তিনি আর কিছু চান না।

আয়েশা আক্তার রাজশাহী নগরের তেরখাদিয়া এলাকার বাসিন্দা। এর আগে তিনি সাংসদ এনামুল হককে স্বামী দাবি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আলোচনায় আসেন। তখন তিনি অভিযোগ করেছিলেন, সাংসদ তাঁর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তাঁর গর্ভের ভ্রূণ হত্যা করেছেন। এখন তিনি হত্যার হুমকি পাচ্ছেন।

এর আগে সাংসদ এনামুল আয়েশাকে ২০১৮ সালে বিয়ে করেছেন বলে স্বীকার করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন। তবে গত ২৩ এপ্রিল আয়েশাকে তিনি তালাক দিয়েছেন বলে দাবি করেন।

গত ২৯ মে আয়েশা আক্তার নিজের ফেসবুকে সাংসদ এনামুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি প্রকাশ করেন। তাঁর ফেসবুকের কভার ছবি ও প্রোফাইল ছবিতেও সাংসদের সঙ্গে তাঁকে দেখা যায়। এ নিয়ে গত ২ জুন গণমাধ্যমে প্রথম খবর প্রকাশিত হয়। এরপর আয়েশার বিরুদ্ধে মামলা হলে তিনি পালিয়ে থাকেন।