এখনো শনাক্ত হয়নি সাংবাদিক ফয়সালের লাশ, ছবিটিও তার নয়

এখনো শনাক্ত হয়নি সাংবাদিক ফয়সালের লাশ, ছবিটিও তার নয়

শরীয়তপুর, ১৫ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : নেপালের কাঠমুন্ডতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত বৈশাখী টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার আহমেদ ফয়সালের লাশ এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার দিন সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে প্রচারিত হাসপাতাল বেডের ছবিটি ফয়সালের ছিল না বলে জানা গেছে। বিষয়টি জানার পর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকা থেকে নেপালে পাঠানো হয়েছে ফয়সালের ব্যবহারের জিনিসপত্র। এদিকে পরিবারের লোকজন কখন পাবে তাদের প্রিয় ফয়সালের লাশ এই অপেক্ষায় রয়েছেন।

ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম ও ভগ্নিপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু ফয়সালের মৃত্যু সংবাদের পর ইতালি থেকে দেশে ফিরেছেন বুধবার রাতে। এখনো চলছে স্বজনদের আহাজারি। কিছুক্ষণ পর পরই মা-বাবা হাউ মাউ করে ফয়সাল ফয়সাল বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। ছোট সাইফুল ও রাকিব ভাই হারানোর বেদনায় ডুকরে ডুকরে ভাই ভাই বলে কেঁদেই চলছে।

বড়বোন শিউলি ফয়সালের সাথে শেষ কথাটি আপু চিন্তা করিস না, আমি ঢাকার বাইরে যাচ্ছি, তাড়াতাড়ি চলে আসব, এ কথা বলেই বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। ছোট বোনটিও ভাইয়ের হারানোর শোকে মূহ্যমান। এক মাত্র আদরের ভাগ্নে শাহরিয়ার কান্না জড়িত কন্ঠে বলছেন, ছুটির দিনে আমাকে আর মামা ঘুরতে নিয়ে যাবে না, আমাকে ফাস্টফুট খাবার কিনে দিবে না বলতে বলতেই তার চোখ দুটি ছল ছল করছিল।

পাশে থাকা ভগ্নিপতি ইতালীপ্রবাসী মিজানুর রহমান বাচ্চু চোখ মুছতে মুছতে বলছেন, বৈশাখী টিভির অফিস থেকে ফোনের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। আত্মীয় স্বজনসহ এলাকার লোকজন কোনোভাবেই সান্তনা দিয়েও তাদের কারো কান্না থামাতে পারছেন না। পরিবারের আকুতি দেখে কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। এরকম দৃশ্যই দেখা গেছে বৃহস্পতিবার দুপুরে ফয়সালের শরীয়তপুরের ডামুড্যার বাড়ি গিয়ে।

ফয়সালের পরিবারের সাথে কথা বলে জানাগেছে, ফয়সাল ছিলেন ভ্রমণ প্রিয় এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। স্কুল জীবন থেকেই খেলাধুলায় খুব ভালো ছিলেন তিনি। তার স্কুল জীবনের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার এখন শুধুই স্মৃতি। শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের সামসুদ্দিন সরদার ও মোসাম্মৎ সামসুন্নাহার বেগমের বড় ছেলে ফয়সাল আহমেদ (৩০)। পাঁচ ভাই বোনের মধ্য তিনি দ্বিতীয়। ২০০৪ সালে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করার পর ঢাকা তিতুমির কলেজে এইচএসসি এবং স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স সম্পন্ন করেন ফয়সাল।

ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত। ফয়সাল বৈশাখি টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঢাকার ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে বড় বোন শিউলী আক্তারের বাসায় থাকতেন তিনি। চাকরির পাশাপাশি ফয়সাল তৈরী পোশাকের ব্যবসা করতেন। তার মোহাম্মদপুর জাপান গার্ডেন সিটিতে দুইটি তৈরী পোশাক বিক্রির দোকন ছিল। গত সোমবার তিনি অফিস থেকে ৫ দিনের ছুটি নিয়ে পরিবারের কারো কাছে কিছু না বলেই নেপালে যান। যাওয়ার প্রাক্কালে তিনি তার বড় বোন শিউলি বেগমকে বলে যান ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন। এটাই পরিবারের কারো সাথে ফয়সালের শেষ কথা ছিল।

তিনি সোমবার দুপুরে বিমান দুর্ঘটনায় প্রথমে নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ আসে। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া হাসপাতালের যে ছবিটি ফয়সালের বলে ধারণা করা হয়েছিল সেই ছবিটি ফয়সালের ছিল না বলে জানান পরিবারের লোকজন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ফয়সাল বিমানের ভিতরেই পুড়ে গেছেন। ফয়সালের লাশ সনাক্ত করার জন্য তার মামা কায়কোবাদ নেপালে রয়েছেন। সেখানে তার লাশ সঠিকভাবে সনাক্ত না হওয়ায় বৈশাখী টেলিভিশন অফিস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ফয়সালের ব্যবহৃত মোবাইল চার্জার, টাওয়াল, জুতাসহ অন্যান্য পোশাকাদি ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নেপালে পাঠানো হয়েছে। ফয়সালের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত তার বাড়িতে শত শত লোকজন ভিড় করছে। বাড়িতে এখনো চলছে কান্নার আহাজারি। পুত্র শোকে ফয়সালের মা সামসুন্নাহার বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, আপনারা ছবি তুলে আমার সোনার মানিক ছেলে ফয়সালকে এনে দিতে পারবেন? তাহলে যত খুশি ছবি তুলে নেন। আমি আমির ছেলেকে ফিরে পেতে চাই।

বাবা সামসুদ্দিন সরদার 'কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, আমার ছেলে ফয়সাল জীবিত থাকতে বুঝতে পারিনি এত লোক আমার ছেলেকে ভালোবাসে। আমার বাবা বাজার মিলিয়ে আমাদের সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। এখন শুধুই আমার বাবার মরদেহ দেখতে চাই। আমার কাঁধে বয়েই আমার ছেলেকে মাটি দিয়ে আমার শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে চাই।

(জাস্ট নিউজ/একে/২২০১ঘ.)