আবরার ফাহাদ হত্যা

“প্রতিবাদ করলে আমাদেরও মারবে”

“প্রতিবাদ করলে আমাদেরও মারবে”

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আরও তিনজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁরা হলেন নিহত আবরারের চাচা মোমিরুল ইসলাম, বুয়েট মেডিকেল সেন্টারের গাড়িচালক আবুল কালাম ও সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তা রফিকুল হাসান।

বুধবার এই তিন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার ৩৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।

আবরারের চাচা মোমিরুল ইসলাম আদালতকে বলেন, গত বছরের ৭ অক্টোবর ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে তাঁর বড় ভাই বরকত উল্লাহ (আবরারের বাবা) তাঁকে ফোন দেন।

তিনি জানান, আবরারকে কে বা কারা মেরে ফেলেছে। তাড়াতাড়ি মোমিরুল যেন ঢাকায় রওনা দেন। খবর পেয়ে তিনি বগুড়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। রাত আটটার দিকে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আবরারের লাশ দেখতে পান। আবরারের হাতে, পায়ে ও পিঠে থেঁতলানো দাগ দেখতে পান।

সেদিন রাত নয়টার সময় তিনি শেরেবাংলা হলে যান। সেখানে রাসেল, জহুরুল ও রাকিবকে দেখতে পান। পুলিশ হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে তল্লাশি চালায়। আর ২০১১ ও ২০০৫ নম্বর কক্ষ র‌্যাব-পুলিশ ঘিরে রেখেছিল। ২০১০ নম্বর কক্ষ থেকে পুলিশ ক্রিকেট স্ট্যাম্প ও চাপাতি উদ্ধার করেছিল।

আবরারের চাচা মোমিরুল আদালতকে আরও বলেন, গত বছরের ৬ অক্টোবর রাত আটটার দিকে আবরারকে তাঁর রুম থেকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে ফেলে ছাত্রলীগের কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেন। তিনি সেদিন হলের প্রভোস্টের কক্ষে যান।

তিনি প্রভোস্টকে বলেছিলেন, ‘আপনার হলের একজন ছাত্রকে মেরে ফেলেছে, অথচ আপনি প্রতিবাদ করেননি। তখন প্রভোস্ট বলেছিলেন, “প্রতিবাদ করলে আমাদেরও মারবে।”’

হলের ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পুলিশের সহায়তায় তিনি দেখেছিলেন বলে জানান মোমিরুল ইসলাম। তাতে তিনি দেখেছিলেন, আবরারকে হত্যা করার পর তাঁর লাশ ধরাধরি করে নিচতলার বারান্দায় ফেলে রাখেন আসামিরা।

ভিডিও ফুটেজ দেখে রাসেল, তোহা, ফুয়াদ, জিসান, আকাশ, শামীম, মাজেদ, তানভীর, মোয়াজ, সাদাত, মোর্শেদ ও জেমির নাম জানতে পারেন তিনি।

সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তা রফিকুল হাসান আদালতকে বলেন, বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা মামলার তিন আসামির মুঠোফোন ও একটি ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের স্ক্রিনশট আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালতের অনুমতি নেওয়ার পর এসব আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হয়। ফরেনসিক পরীক্ষায় দুটি ফেসবুক গ্রুপের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। একটি গ্রুপের সদস্য ১০ জন, অন্যটিতে ৩৯ জন। আদালতে ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষে এই মামলা পরিচালনা করছেন আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া, আবদুস সোবহান তরফদার, প্রশান্ত কুমার কর্মকার, মিজানুর রহমান, আলমগীর হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও মশিউর রহমান। আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন আমিনুল গনি, আজিজুর রহমান, ফারুক আহমেদ প্রমুখ।

গত বছরের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটে শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ২১ জানুয়ারি অভিযোগপত্রটি আমলে নেন আদালত। বর্তমানে তিন আসামি পলাতক।

গত ২ সেপ্টেম্বর বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশে শিবির সন্দেহে আবরারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে আবরারকে হত্যা করা হয়।