‘ডিবি’ পরিচয়ে ব্যবসায়ী অপহরণ, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উধাও

‘ডিবি’ পরিচয়ে ব্যবসায়ী অপহরণ, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উধাও

ঢাকা, ১৭ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ধনাঢ্য ব্যবসায়ীকে অপহরণের ঘটনা তদন্তে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ঘটনার ছয় দিন পর পুলিশ বলছে, ওই বাসায় সিসি ক্যামেরা থাকলেও অপহরণকারীরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের ডিভিআর (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) বক্সটি নিয়ে গেছে। এ কারণে অপহরণকারীদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। অপহৃত ব্যবসায়ী সজল চৌধুরীর (৪৭) চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙা ব্যবসাসহ আরো কয়েকটি ব্যবসা রয়েছে।

পরিবার জানায়, রবিবার রাতে ১৫ থেকে ১৬ জন সশস্ত্র ব্যক্তি নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাসায় ঢুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সজলকে। এরপর তাকে নিয়ে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী মো. এমদাদকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের ডিভিআর বক্স নিয়ে যায়।

এমদাদ জানান, অপহরণকারীরা তার পেটে লাথি মেরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফুটেজ নিয়ে যায়। তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন সজল চৌধুরীর মা দেলোয়ারা বেগম।

দেলোয়ারা বেগম জানান, চট্টগ্রামে ব্যবসা নিয়ে এক অংশীদারের সঙ্গে সজলের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়েছে। এর বাইরে অন্য কোনো ঘটনার কথা তিনি জানেন না। ঘটনার দিন ১৫ থেকে ১৬ জন বাসায় ঢুকে অস্ত্রের মুখে সজলকে জিম্মি করে। তারা ডিবি পরিচয় দিলেও তাদের পোশাকে ‘ডিবি’ লেখা ছিল না।

তিনি বলেন, সজলের জন্মের আগে মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে তার বাবা মিজানুর রহমান চৌধুরী শহীদ হয়েছেন। ব্যবসা করে সজল পরিবারের হাল ধরেছেন। সজল অপহরণ হওয়ার পর প্রতিদিনের সংসার চালানোর টাকাও নেই মায়ের কাছে।

তিনি আরও জানান, কয়েক বছর আগে সজলের স্ত্রী মারা যান। বসুন্ধরায় মাকে (দেলোয়ারা) ও কিশোর ছেলে নিয়ে ভাড়া থাকেন সজল। ঘটনার দিন তাদের বাসা পরিবর্তনের জন্য মালামাল সরানোর কথা ছিল। ওই সময় অপহরণকারীরা বাসায় ঢুকে সজলকে তুলে নিয়ে যায়।

ভাটারা থানার ওসি এসএম কামরুজ্জামান বলেন, ব্যবসায়ী সজল অপহরণের ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়েছে। জিডির সূত্র ধরে তদন্ত চলছে। এখন পর্যন্ত বলার মতো কোনো অগ্রগতি হয়নি। ব্যবসায়ী সজল চৌধুরী অপহরণের ঘটনার জিডির তদন্ত করছেন ভাটারা থানার এসআই শাহিন মোহাম্মদ আমানুল্লাহ।

শুক্রবার দুপুরের পর এসএম কামরুজ্জামান বলেন, সজলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দুটি অপহরণকারীরা বাসায় রেখে গেছে। তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের ভিডিআর বক্স নিয়ে গেছে। ওই বাসার আশপাশের কোনো সিসি ক্যামেরার ফুটেজও পাওয়া যায়নি। ফলে অপহরণকারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

দুটি মাইক্রোবাস নিয়ে আসে অপহরণকারীরা
বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী মো. এমদাদ যুগান্তরকে জানান, অপহরণকারীরা দুটি মাইক্রোবাস নিয়ে আসে। সন্ধ্যার দিকে বাসা বদলের জন্য ট্রাকের চালক আসেন। ওই সময় খোলা দরজা দিয়ে কয়েকজন বাসায় ঢুকে যায়। কিছুক্ষণ পর হাতকড়া পরিয়ে সজলকে বেঁধে নিচে নামানো হয়। পরে তারা দুটি মাইক্রোবাসে করে চলে যায়।

দেলোয়ারা বেগম বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। বাসা বদলের জন্য সবকিছু গোছগাছ করার সময় নিরাপত্তা কর্মী জানান, ট্রাকের চালক এসেছে। এমন সময় ১৫ থেকে ১৬ জন ঘরে ঢুকে পড়ে। নিজেদের ‘ডিবি সদস্য’ বলে পরিচয় দিয়ে তারা অস্ত্রের মুখে সজলকে জিম্মি করে বেঁধে ফেলে। সজলকে মারধরও করা হয়। চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে সজলকে নিয়ে তারা চলে যায়। ঘটনার সময় সজলের স্কুলপড়ুয়া ছেলে পাশের কক্ষে ঘুমাচ্ছিল। সে কিছু টের পায়নি। ঘটনার পর তিনি ভাটারা থানা, র‌্যাব ও ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে কারো সহায়তা পাননি বলেও জানান।

দেলোয়ারা আরো বলেন, সম্পত্তি, ব্যবসা সবকিছুই সজল দেখাশোনা করত। তার অপহরণের পর বাসায় পর্যাপ্ত খাবার নেই। চরম বিপদে পড়েছেন তারা।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০১৫ঘ.)