১০ বছরেও শেষ হয়নি দুটি সেতুর নির্মাণকাজ!

১০ বছরেও শেষ হয়নি দুটি সেতুর নির্মাণকাজ!

রাঙামাটির উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঘনবসতি এলাকা হলো লংগদু। মাইনীমুখ ইউনিয়নটি এই উপজেলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইউনিয়নটি যেমন ব্যবসা-বাণিজ্যের মূলকেন্দ্র তেমনি অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান, প্রাথমিক-হাইস্কুল এবং মাদরাসাও রয়েছে।

বর্তমান সরকার ইউনিয়নটির গুরুত্ব বুঝে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করে দিতে স্থানীয়দের দাবির মুখে ‘সোনাই ৩ নম্বর ব্লক ও সোনাই বাজার-নোয়াখালী পাড়া’ এলাকায় দু’টি সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। সেতু দু’টি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়- রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদকে।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়- সোনাই ৩ নম্বর ব্লক এলাকার সেতুটির কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে প্রায় ১০ বছর ধরে। মাইনী নদীর এপার-ওপার মিলে কয়েকটি পিলার তোলা হয়েছে মাত্র। সেতুর অভাবে বাঁশের ভেলা দিয়ে পার হতে গিয়ে নদীতে ডুবে অনেক শিশু স্কুল শিক্ষার্থী মারা গেছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

সোনাই ৩ নম্বর ব্লক এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা খাদিজা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, কত কষ্টে আছি বুঝাতে পারবো না। আমার বাচ্চারা স্কুলে যায় বাঁশের ভেলা পার হয়ে। প্রতি বছর নদী পার হওয়ার সময় অনেক শিশু শিক্ষার্থী নদীতে ডুবে মারা গেছে বলে জানান তিনি।

একই অভিযোগ কামেনা আক্তারের। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় স্কুল ও মাদরাসা রয়েছে। প্রতিদিন শতশত শিক্ষার্থীকে নদী পারাপার হতে হয় অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে।

আব্দুল মোতালেব জানান, এটা সেতু নয়, আমাদের জন্য অভিশাপ। সেতুর কাজ শেষ করতে আন্দোলন করে যাচ্ছি।

এদিকে ‘সোনাই বাজার-নোয়াখালী পাড়া’ নামক সেতুটির কাজও বন্ধ রয়েছে প্রায় পাঁচ বছর ধরে। সেতুটির মাত্র এক তৃতীয়াংশ কাজ শেষ হয়েছে। ওই এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজারও রয়েছে। সেতুটির কাজ শেষ না হওয়ায় দুই পারের প্রায় সহস্র মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেলিম, লোকমান হোসেন, মো. ফারুক, মো. রুবেল, মো. সুমন বলেন, আমরা অনেক কষ্টে আছি। বর্তমান সরকার দেশে এত উন্নয়ন করছে অথচ আমাদের এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অসমাপ্ত সেতুটির কাজ শেষ করার উদ্যোগ নিচ্ছে না। কি কারণে সেতুর কাজ বন্ধ আছে তাও জানি না। তবে সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের এলাকার সেতুর কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন শেষ করে দেয়।

মাইনীমুখ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার এবং সোনাই বাজার এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হাসেম বলেন, আমার এলাকায় সহস্র মানুষের বসবাস। এজন্য সরকার আমার এলাকার জনগণের যোগাযোগ সহজ করতে দু’টি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। অনেক বছর ধরে আমাদের এলাকার নির্মাণাধীন দু’টি সেতু পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সরকারের কাছে আমার একটাই দাবি- এলাকার স্বার্থে সেতু দু’টির কাজ যেন শিগগিরই শেষ করা হয়।

জানা গেছে, ‘সোনাই ৩ নম্বর ব্লক’ ও ‘সোনাই বাজার-নোয়াখালীপাড়া’ নামক সেতু দু’টির নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে পার্বত্য জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদ ২০১১ সালের দিকে ‘সোনাই ৩ নম্বর ব্লক সেতু’ ও ২০১৫ সালের দিকে ‘সোনাই বাজার-নোয়াখালীপাড়া’ নামক সেতুটি নির্মাণ কাজে হাত দেয়। তবে সেতু দু’টির বাজেট কত, কবে নাগাদ সেতু দু’টির কাজ শেষ হবে এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের নির্বাহী প্রকৌশলী বিরল বড়ুয়া বলেন, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া কোনো বক্তব্য বা তথ্য দিতে পারবো না।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন এসেছি। আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টির ব্যাপারে অবগত হয়েছি। সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখে পরবর্তী কি ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা জানানো হবে।সূত্র : বাংলানিউজ

এমজে/