নেপাল বিমান দুর্ঘটনা

আহাজারি আর দীর্ঘশ্বাসে ভারী আর্মি স্টেডিয়ামের বাতাস

আহাজারি আর দীর্ঘশ্বাসে ভারী আর্মি স্টেডিয়ামের বাতাস

ঢাকা, ১৯ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ জনের মধ্যে ২৩ জন বাংলাদেশী যাত্রীর মরদেহ ঢাকায় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে এসব মরদেহ কাঠমান্ডু থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।

এরপর আর্মি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয় মরদেহসমূহ। নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ছাড়াও, এসেছিলেন যাদের মরদেহ এখনো শনাক্ত হয়নি, তাদের পরিবারের সদস্যরা। এসময় সেখানে তৈরী হয় এক শোকাবহ পরিবেশ।

রবিবার রাতেই জানা গিয়েছিল পরদিন দুপুরে আসছে স্বজনদের মরদেহ। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছেন বেশিরভাগ পরিবারের সদস্যরা। আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর আইএসপিআর জানিয়ে দিয়েছিল আর্মি স্টেডিয়ামে বিকাল ৪টায় দ্বিতীয় দফা জানাজা হবার পরই পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হবে মরদেহ।

সে অনুযায়ী দুপুরের পরপরই স্বজনেরা আসতে শুরু করেন আর্মি স্টেডিয়ামে। ঢোকার মুখে ভিআইপি গ্যালারির দুইপাশেই আত্মীয়দের বসার ব্যবস্থা করা হয়। এরই একপাশে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন তাহিরা তানভিন শশীর মা।

শশীর খালু জানাচ্ছেন, আগামীকাল নাগাদ দাফন হবে পরিবারের আদরের মেয়েটির। “লাশ নেয়ার পর আজ দেরি হয়ে যাবে। রাতে বারডেম বা সিএমএইচ কোথাও হিমঘরে রাখা হবে। পরে কাল মানিকগঞ্জে দাফন করা হবে,” বলছিলেন তিনি।

গ্যালারির আরেক পাশে স্তব্ধ হয়ে বসেছিলেন বিধ্বস্ত ইউএস বাংলার কেবিন ক্রু খাজা হোসেইন মো. শাফেই-এর মা। তার বোন বাসিমা সাইফুল্লাহ বলছিলেন, কাঠমান্ডুতে ভাই এর মরদেহ শনাক্ত করতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাকে।

“কেউ জানতো না আমার ভাইকে কোন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সেটা আমি নিজে খুঁজে বের করেছি। অ্যাম্বেসি থেকে দেয়া তালিকায় দুইবার আমার ভাই এর নাম রিপোর্টেড ডেড হিসেবে দেয়া হইছিল। নিজের চোখে প্রতিটা ডেডবডি দেখছি আমি। একটা যুদ্ধের সাইট থেকে আসছি আমরা।”

কেবল নিহত মানুষদের স্বজনেরাই নন, আর্মি স্টেডিয়ামে এসেছিলেন মরদেহ শনাক্ত হয়নি বলে, সোমবার যাদের মরদেহ বাংলাদেশে এসে পৌঁছয়নি এমন পরিবারের সদস্যরাও।

মাঠের এক কোনে দাঁড়িয়েছিলেন মোল্লা আলিফুজ্জামানের মা এবং ভাই ইয়াসিন আরাফাত। ভাইয়ের লাশ শনাক্ত হতে কতদিন লাগবে, আর কতদিনে দাফনের ব্যবস্থা হবে, তা নিয়ে উৎকন্ঠিত তাদের পরিবার।

“আমার ভাইয়ের লাশটা তাড়াতাড়ি আনা হোক। গড়িমসি করে, ডিএনএ টেস্টের নামে যেন দেরি করা না হয়, এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া। একবার শুনতেছি এক সপ্তাহ লাগবে, একবার শুনি ২১ দিন লাগবে, একবার শুনি একমাস লাগবে। সিআইডির কাছে শুনলাম পনের থেকে একমাস লাগবে। আমরা কনফার্ম হতে পারছিনা আসলে কতদিন লাগবে।”

বিকাল সাড়ে ৪টায় যখন একে সেনাবাহিনীর জওয়ানেরা কফিনগুলো আর্মি স্টেডিয়ামের নির্দিষ্ট মঞ্চে এনে রাখতে শুরু করলেন, স্বজনদের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ তখন হঠাৎ করে ভারী হয়ে ওঠে। পরে জানাজায় শরিক হন বহু মানুষ। স্বজন নন, এমন অনেক মানুষও যোগ দিয়েছিলেন সেই জানাজায়।

গত ১২ মার্চের ঐ দূর্ঘটনায় একই পরিবারের দুইজন নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। আহত মেহেদী হাসানকে মাত্র পরশুদিন নিয়ে আসা হয়েছে নেপাল থেকে, ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে গলায় আর হাতে ব্যান্ডেজ বাধা অবস্থাতেই ভাই আর ভাইয়ের মেয়েকে শেষবারের মত দেখতে এসেছিলেন তিনি।

বলছিলেন, “ভাই আর ভাইয়ের মেয়েটাকে একবার, শেষবার চোখের দেখা দেখতে আসছি। জানাজা পড়ে আবার আমি হাসপাতালে ফিরে যাব।”

তেইশটি পরিবার, ভিন্ন ভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামো থেকে আসা একেকজন। কিন্তু একই বেদনা বুকে চেপে তারা হয়ে গিয়েছিলেন পরস্পরের আত্মীয়।

কেউ চুপচাপ বসেছিলেন, কেউ একটু পরপর ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন। এর মধ্যে রকিবুল হাসানের মা কিছুক্ষন পরপরই চিৎকার করে কেঁদে উঠছিলেন আর সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন। -বিবিসি

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২৩৩৯ঘ.)