জমিও পালাম না, ঘরও পালাম না

জমিও পালাম না, ঘরও পালাম না

ষাটোর্দ্ধ ভূমিহীন নবিরন খাতুন। এই বয়সেও পূরণ হয়নি তার স্বপ্ন। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এখনো জীবন যাপন করেন জরাজীর্ণ বাড়িতে। স্বপ্ন ছিল শেষ বয়সে অন্তত ফুটো টিনের পরিবর্তে একটু ভালো ঘরে থাকবেন। সে স্বপ্ন পূরণ হওয়া তো দূরের কথা যে জমিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাও বিক্রি হয়ে গেছে। কোথায় যাবেন ভেবে পাচ্ছেন না। পাগলের মতো ছুটছেন সরকারি দফতরগুলোতে।

২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ঘর নির্মাণের জন্য সরকারিভাবে কবুলিয়ত খাস জমি পান তিনি। দীর্ঘ পাঁচ বৎসর পেরিয়ে গেলেও এখনো দখল পাননি। মেলেনি সরকারি সহায়তা। উল্টো তাকে গালিগালাজ, ধামকি শুনতে হচ্ছে।

নবিরনের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার তেলিপুকুর গ্রামে। তিনি চুন্নু মিয়ার স্ত্রী।

স্থানীয়রা জানান, দশ বছর আগে স্বামী হারিয়েছেন নবিরন। পরের জায়গায় কোনো রকম ঘর পেতে এক ছেলে নিয়ে বসবাস করেন। কখনো খাবার জোটে, কখনো জোটে না। ৪০ দিনের কর্মসূচিসহ বিভিন্ন জায়গায় মাটি কাটার কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন কাজে অক্ষম হয়ে পড়েছেন। তবুও ভিক্ষা করেন না। ২৫/২৬ বছর আশ্রয় নেয়া জমিও এখন বিক্রি হয়ে গেছে। যেকোনো সময় তার ওই জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। এখন তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

নবিরোন নেছা বলেন, ‘আমার দশটাকার একখান কার্ডও নাই, ভিজিএফ কার্ডও নাই। বিধবা ভাতা বানাবো তাও বলে ৫/৬ হাজার টাহা লাগবি। এন্নে আমার কাছে টাহা নাই বাজান। আমি এহন কি হরব। কোন ধকল নাই। পরের জায়গায় থাকিরে বাজান, এট্টু জাগা জমি নাই। বিভাগ কমিশনার জমিডা দিছিল। আপনারা মনে হরেন বিটি ভিক্ষে হরে খায়। না বাজান ভিক্ষে হরে খাইনে। সারাজীবন কাম হরে খাইছি। আমার জমিডা আমারে এহন কেউ বুঝে দেয়না। অফিসি গিলি কয় তোমার বাপের জমি নাহি। আমারে বিশ্রি কতাবাত্তারা কয়। সরকার জাগার ঘর নাই তাগারে জমি দিচ্ছে, ঘর দিচ্ছে। আমি জমিও পালাম না, ঘরও পালাম না।'

মহম্মদপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাবেয়া বেগম বলেন, নবিরন নেছা সরকারিভাবে জমি পেয়েছে। কিন্তু দখলে যেতে পারছে না। আমি আগের ইউএনও স্যারের কাছে বলেছিলাম তার দখল বুঝায়ে দেওয়ার জন্য।

এ ব্যাপারে মাগুরা জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বলেন, অনেকে আছে তাদের সামর্থ্য নেই জমিতে যাওয়ার। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন দিলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল বলেন, তিনি আবেদন দিলে তার কাগজপত্র দেখে জমির দখল দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমজে/