নিরপরাধ কামরুলকে দুদকের দেয়া সাজা হাইকোর্টে বাতিল

নিরপরাধ কামরুলকে দুদকের দেয়া সাজা হাইকোর্টে বাতিল

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ‘সরল বিশ্বাসে’ কামরুল ইসলামকে দেয়া সাজা বাতিল করেছে হাইকোর্ট। একই সাথে তদন্তকারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোম্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন।

আদালত রায়ে বলেন, যদি আবেদনকারী ক্ষতিপূরণের বিষয়ে দুদকে আবেদন করেন, তখন দুদক যেন বিবেচনা করে।

আদালতে দুদক স্বীকার করেছে, তাদের ‘সরল বিশ্বাসে’ চলা তদন্তে ভুল হয়েছে। হাইকোর্টে ক্ষমা চেয়ে সংস্থাটি বলেছে, গ্রামের নামে সামঞ্জস্যের কারণে আসল অপরাধীর পরিবর্তে ভুল ব্যক্তির নামে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভুল তদন্তের ওপর নিরাপরাধ যুবককে তিনটি ধারায় দেয়া ১৫ বছরের কারাদণ্ডের রায় বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। একইসাথে এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে নতুন করে ওই মামলা তদন্ত করতে বলেছেন উচ্চ আদালত।

আদালতে রিট আবেদনকারী যুবকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

১৯৯৮ সালের এসএসসির সনদ জালিয়াতি করে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছেন এক যুবক- এমন অভিযোগ এনে ২০০৩ সালের মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো।

১০ বছর পরে অভিযোগ পত্র দাখিল এবং ২০১৪ সালে মামলার বিচার শেষে আসামিকে পলাতক দেখিয়ে তিনটি ধারায় পাঁচ বছর করে ১৫ বছরের সাজা দেন আদালত। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।

এ দণ্ডে গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা দেখে নিরাপরাধ যুবক হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে তিনি উল্লেখ করেন, তার জন্ম ১৯৯০ সালে। এমনিক তিনি সংশ্লিষ্ট কলেজে কোনো দিন ভর্তি হননি। এরপর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলের জবাবে দুদক বলছে-সরল বিশ্বাসের ভুল (বোনাফাইড মিসটেক)।

এমন ঘটনা ঘটেছে নোয়াখালীতে। তবে রিটকারী যুবককে একদিনও জেল খাটতে হয়নি।

রিটের নথি ঘেটে জানা যায়, ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর কুমিল্লা অঞ্চলের প্রসিকিউটিং পরিদর্শক মোঃ শহীদুল আলম একটি এজাহার দায়ের করেন।

মামলায় বলা হয়, নোয়াখালী সদর থানার পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে কামরুল ইসলাম নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫৭৬ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাসের জাল/ভুয়া মার্কশিট ও প্রশংসাপত্র সৃজন/সংগ্রহ করে ১৯৮৯-৯৯ সেশনে মাইজদী পাবলিক কলেজে ভর্তি হন।

মামলাটির তদন্ত করেন দুর্নীতি দমন কমিশন নোয়াখালীর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাহফুজ ইকবাল। পরে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর চার্জশিট জমা দেন। মামলার বিচার শেষে নোয়াখালীর বিশেষ জজ শিরীন কবিতা আখতার ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর রায় দেন। রায়ে কামরুল ইসলামকে পেনাল কোডের ৪৬৭ ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, ৪৬৮ ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, ৪৭১ ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রায়ে বলা হয়, সব কারাদণ্ড একসাথে চলবে, কিন্তু অর্থদণ্ড পৃথকভাবে দিতে হবে। অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

এ রায়ের পরে পুলিশি তৎপরতা দেখে নোয়াখালী সদরের পূর্ব রাজারামপুরের মোঃ আবুল খায়েরের ছেলে মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে রিট করেন।

রিটে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি ১৯৯০ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৬ সালে হরিনারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। দরিদ্র্যের কারণে এইচএসসিতে ভর্তি হতে পারেননি তিনি। ২০০৮ সালের ৮ জুলাই এমএলএসএস হিসেবে লক্ষ্মীপুর আদালতে যোগ দেন। পরে নোয়াখালীতে বদলি হন। ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে তিনি নোয়াখালী আদালতের অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

রিটে আরো বলা হয়, মামলায় ১৯৯৮ সালের ঘটনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আবেদনকারীর দাবি, তখন তার বয়স ছিল আট বছর। আর যে কামরুলের কথা মামলায় বলা হয়েছে, তার বাড়িও একই উপজেলায়। কাকতলীয়ভাবে তার বাবার নাম এবং আবেদনকারীর বাবার নামও একই। তবে গ্রামের নামের প্রথম অংশ ভিন্ন। আবেদনকারীর গ্রামের নাম হচ্ছে পূর্ব রাজারামপুর। আর দণ্ডিত কামরুলের গ্রামের নাম হচ্ছে পশ্চিম রাজারামপুর। সুতরাং রিট আবেদনকারী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম আসামি নন, দণ্ডিতও নন।

এ রিট আবেদনে হাইকোর্ট গত বছর ৫ নভেম্বর রুল জারি করেন এবং দুদকের কাছে এ ঘটনার ব্যাখ্যা চান। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী রুলের জবাব দিয়ে দুদক ভুল স্বীকার করেন।

এমজে/