আল জাজিরার অনুসন্ধান

সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে খেলতে আসবেন না: সেনাপ্রধান

সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে খেলতে আসবেন না: সেনাপ্রধান

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, আল-জাজিরার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বানও জানান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী নিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে খেলতে আসবেন না। সেনাবাহিনী দেশের গর্ব। এটিকে নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে নানান গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বাহিনী এখন অনেক সুসংহত। বাহিনী ঘৃণাভরে এসব প্রত্যাখান করেছে। পুরো চেইন অব কমান্ড সবাই-ই সতর্ক৷ সেনাবাহিনী সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এসব প্রচারণায় কিছুই হবে না বাহিনীর।

সেনাপ্রধান বলেন, পরিবারের সদস্যরা অব্যাহতি পাওয়ার পরই ভাইয়েরা এসেছিল। আমরা সংবাদ সম্মেলনে সব বলবো। সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি বজায় রাখতে কি করতে হবে সে ব্যাপারে আমি ওয়াকিবহাল। আল-জাজিরা যা করেছে সেটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সময় চিত্রধারণ প্রসঙ্গ তিনি বলেন, পারিবারিক কাজে অফিশিয়াল প্রটোকল ব্যবহার করিনি। সে সময়ই এমন কাজগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসবের চিত্রধারণ করা হয়েছে। সেনাপ্রধানকে হেয় করার মানে প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করা। আমার কারণে সেনাবাহিনী ও সরকার যাতে বিব্রত না হয়। সে ব্যাপারে আমি পূর্ণ সচেতন। তারা কাটপিস দিয়ে এসব বানিয়েছে।

চক্রান্তকারীদের উদ্দেশ্য কোনোভাবেই সফল হবে না বলেও জানান জেনারেল আজিজ আহমেদ।

 

ওই প্রতিবেদনে সেনাপ্রধানকে হেয় করার মাধ্যমে 'প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করা' হয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

প্রতিবেদনটি সম্প্রচারের সময় জেনারেল আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন। দেশে ফিরে প্রতিবেদনটি সম্পর্কে তিনি আজই (মঙ্গলবার) প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কথা বলেন ।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বিদেশে তার 'পলাতক' ভাইদের সাথে দেখা করা এবং বাংলাদেশে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "সেদিন আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে না কোন সাজা ছিল, না তার বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিল।"

"তার আগেই যে মামলাটি ছিল তা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।"

'অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার'স মেন' নামের আল জাজিরার প্রতিবেদনটি সম্প্রচারের পর থেকে এ নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

সেনাপ্রধান বলেন, "আমি যখন সরকারি কাজে কোথাও থাকবো তখন আমার নিরাপত্তা অফিসিয়ালি নিশ্চিত করা হয়। যে দেশে যাই সেই হোস্ট কান্ট্রি করে থাকে।

"কিন্তু যখন আমি কোথাও আমার ব্যক্তিগত সফরে থাকি ... হয়ত কোন আত্মীয় স্বজনের কাছে যাই, সেই সময় অফিশিয়াল কোন প্রোটোকল ব্যবহার করা আমি সমীচীন মনে করি না। আমি মনে করি সেটা অপচয়। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যদি কেউ কিছু করে থাকে, তাহলে সেটা অসৎ উদ্দেশ্য"।

আল জাজিরার প্রায় এক ঘণ্টার প্রতিবেদনটির মূলকেন্দ্রে ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং তার তিন ভাই।

জেনারেল আজিজ আহমেদের আপন তিন ভাই একাধিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আদালতে দণ্ডিত হয়েছিলেন। যাদের মধ্যে দুইজন হারিস আহমেদ এবং আনিস আহমেদ পলাতক রয়েছেন বলেআল জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আনিস আহমেদ থাকেন কুয়ালালামপুরে আর হারিস আহমেদ আছেন হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, হারিস আহমেদ এবং আনিস আহমেদ দুজনকেই জেনারেল আজিজ আহমেদের ছেলের বিয়েতে বাংলাদেশে দেখা গেছে।

বারবার কেন তাকে 'টার্গেট' করা হয় একজন সাংবাদিকের এ রকম এক প্রশ্নের উত্তরে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, "আপনারাই বুঝে নেন কেন সেনাবাহিনীর প্রধানকে টার্গেট করা হচ্ছে? কারণ এই সেনাপ্রধানকে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন।

আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করা মানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করা। আপনাদের এই জিনিসটা বুঝতে হবে।"

তিনি আরও বলেন, "আমার কারণে আমার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং আমাদের সরকার যাতে করে বিব্রত না হয়, বিতর্কিত না হয়, আমি সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন।"

"যা কিছু আপনারা শুনছেন এগুলোর কোন প্রমাণ....বিভিন্ন জায়গা থেকে কাট-পিস সংগ্রহ করে তারা এটা করতেই পারবে, তবে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে না।"

সোমবার রাতে সেনাবাহিনী একটি প্রতিবাদলিপিতেও উল্লেখ করে, সেনাপ্রধানের ভাইয়েরা আগেই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন এবং বাংলাদেশে সেনাপ্রধানের ছেলের বিয়েতে অংশগ্রহণের সময় তারা দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন না।