বুথের মধ্যে ‘নৌকার ভূত’

বুথের মধ্যে ‘নৌকার ভূত’

রবিবার সকাল থেকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর পৌরসভায় ভোট চলছে। মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়েছিলেন জাকির হোসেন। তিনি যখন নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করছিলেন, তখনই গোপন ভোট বুথের মধ্যে থাকা লোকটি মেয়র পদে নৌকা মার্কায় বোতাম টিপে দেন। ভোট দিয়ে ফিরে ক্ষুব্ধ জাকির বলেন, তিনি মেয়র পদে ভোট দিতে পারেননি। সে ভোট নৌকার লোকজন টিপে দিয়েছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট দিয়েই ফিরতে হয়েছে।

ওই নির্বাচনে ইভিএমে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে দেখা গেছে। দুপুরের মধ্যে অধিকাংশ কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট ঠিকঠাক দিয়েছেন ভোটাররা। এ জন্য অবশ্য সব কাউন্সিলর প্রার্থীকেই সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়েছে।

মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুরুষ ও নারী ভোটারদের পৃথক বুথ। সব বুথেরই গোপন কক্ষে নৌকা প্রার্থীর লোকজন অবস্থান নিয়েছেন। ভোট দিতে গেলে তাঁরা নৌকার বোতাম টিপে ভোট দেন। এ নিয়ে দুপুরে এক ভোটারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হলো। বেলা একটার দিকে ওই কেন্দ্রের নারী বুথের গোপন কক্ষে সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইউছুফ জালালকে অবস্থান করতে দেখা গেল। নারী ভোটাররা ভোট দিতে গেলে তিনিও কক্ষে যান। তবে এ বিষয়ে ইউসুফ জালাল বলেন, তাঁর এক আত্মীয় ভোট দিতে এসেছেন। তাঁকে সহযোগিতার জন্য তিনি এখানে থাকছেন।

ওই কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় পুরুষ ভোটারের বুথ। সেখানেও নৌকার এজেন্ট এক ব্যক্তি গোপন কক্ষে অবস্থান নেন। নাম সাইফুল আলম বলে পরিচয় দিলেন তিনি। কেন এখানে অবস্থান করছেন জানতে চাইলে সাইফুল বলেন, ‘আমি ভোটারদের সহযোগিতা করছি।’

তবে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. শরিফ হোসেন দাবি করেন, কোনো ভোটারই এমন অভিযোগ করেননি। সবাই ঠিকমতো ভোট দিচ্ছেন।

দক্ষিণ কেরোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মহিলা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, গোপন বুথের মধ্যে আওয়ামী লীগের লোকজন দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় ছবি তুলতে গেলে কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা উত্তম কুমার তেড়ে এসে বাঁধা দেন। তিনি বলেন, এখানে ছবি তোলা যাবে না। তখন গোপন বুথের ভেতর নৌকার লোকজনের অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের যেতে বলছি, কিন্তু তারা শোনে না।’

সরকারি ডিগ্রি কলেজসহ আটটি কেন্দ্রে ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। সব জায়গাতেই ভোট বুথের মধ্যে ঢুকে রয়েছে নৌকার লোকজন। ক্ষুব্ধ এক ভোটার স্বগতোক্তি করে বললেন ‘নৌকার ভূত’।

তবে লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দীনের দাবি, ‘অনিয়মের কোনো অভিযোগ কোনো প্রার্থী করেননি। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হচ্ছে।’

লক্ষীপুরের রায়পুর পৌরসভা নির্বাচনে মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পুরুষ বুথে নৌকার লোকজনের অবস্থান। রোববার দুপুরে তোলা।ছবি: প্রথম আলো

মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী এ বি এম জিলানী বলেন, ‘সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে গিয়ে দেখেছেন, গোপন কক্ষে ইভিএমে বোতাম টিপে দিচ্ছেন নৌকার লোকজন। এটি ন্যক্কারজনক ভোট। সকাল ১০টার মধ্যে অধিকাংশ কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ জানাতে রায়পুরের ইউএনওকে কল দিলেও তিনি ধরেন না। অন্য কর্মকর্তাদের অভিযোগ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।’

তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী গিয়াস উদ্দীন রুভেল ভাট বলেন, গোপন কক্ষে নৌকার কোনো লোক অবস্থান করেননি। নিশ্চিত পরাজয় জেনে বিএনপি প্রার্থী মিথ্যাচার করেছেন।