১৩ বিদেশি দূতের বিবৃতি প্রসঙ্গে আব্দুল মোমেন

ওই লোক এসে এখানে মাতব্বরি করবে কেন?

ওই লোক এসে এখানে মাতব্বরি করবে কেন?

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বন্দি মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশকারী বিদেশি কূটনীতিকদের সমালোচনা করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে ফিরে সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

মোমেন আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠকে কেউ আল-জাজিরার প্রতিবেদন ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ প্রতিবেদন নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি।

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বন্দি ব্যবসায়ী-অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট মুশতাকের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ১৩টি কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন।

দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে আসা মোমেন এনিয়ে বলেন, “আমেরিকাতেও বহু লোক জেলে মারা যায়। কিন্তু সেখানে এ ধরনের মৃত্যু নিয়ে কোনো দিন কোনো প্রশ্ন আসে না।

“আমাদের দেশ একটা তাজ্জবের দেশ। একজন মারা গেলেই, সে কী কারণে মারা গেল, আমরা কিন্তু জানি না, মারা গেলেই তখন এটা নিয়ে বিদেশিরা খুব উদ্বেগ প্রকাশ করেন।”

“দেশের লোক করুক, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু বিদেশের লোকগুলো এ ব্যাপারে খুব উদ্বেগ প্রকাশ করেন, এটা একটা তাজ্জবের জায়গা,” বলেন তিনি।

বিদেশি কেউ বিবৃতি দিলে অন্যান্য দেশ সেভাবে গুরুত্ব দেয় না মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “কোনো মলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক মারা গেলে যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত উদ্বেগ প্রকাশ করে, তাহলে কোনো মিডিয়া এটা প্রকাশ করবে না।

“আমাদের দেশে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আপনারা মিডিয়ার এগুলো বর্জন করা ‍উচিত। ওই লোক এসে এখানে মাতব্বরি করবে কেন? এ ধরনের বিষয় প্রকাশ করা থেকে আপনাদের বিরত থাকা উচিৎ।”

সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো হবে কি না- সাংবাদিকরা জনতে চাইলে তিনি বলেন, ”আপনারা দিবেন, আমরা সরকারিভাবে এগুলো দিতে পারি না। আমরা যখন বিদেশিদের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করি, তখনও তারা এ নিয়ে সরকারিভাবে কিছু বলে না। পাবলিক নিজে নিজে বুঝে।”

আল-জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার কিংবা জাতিসংঘের কর্মকর্তারা কোনো প্রশ্ন তুলেছে কি না- প্রশ্ন করা হলে মোমেন বলেন, “বাংলাদেশি টিভি যারা, তারা আমার সাথে এটা নিয়ে আলাপ তুলেছে। আর তুলেছে ভয়েস অব আমেরিকা। বাকি কোনো লোক এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি, আলাপও করেনি।”

“এগুলো বাঙালিদের মাথাব্যথার কারণ,” মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় গত শুক্রবার গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ওইসিডিভুক্ত ১৩টি কূটনৈতিক মিশনের প্রধানরা।

এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, “মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনার সার্বিক বিষয়ের দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্ত করার জন্য আমরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।”

বিবৃতিদাতারা হলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার, ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট ডিকসন, কানাডীয় হাই কমিশনার বেনোয়া প্রিফঁতেন, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি এস্ট্রাপ পিটারসেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজি টিরিংক, ফরাসি রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ মারিও সুশো, জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহল্টৎস, ইতালির রাষ্ট্রদূত ইতালির নতুন রাষ্ট্রদূত এনরিকো নানজিয়াতা, নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হ্যারি ভারউইজ, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেন, স্পেনের রাষ্ট্রদূত ফ্যান্সিসকো দে এসিস বেনিতেজ, সুইডিশ রাষ্ট্রদূত অ্যালেসান্দ্রা বের্গ ফন লিনডে এবং সুইস রাষ্ট্রদূত নাতালি শিয়ার।

লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রও।এক টুইট বার্তায়উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, "ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি বাংলাদেশি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।"

তিনি বলেন, "আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আহবান জানাব এ ঘটনার যেন স্বচ্ছ তদন্ত করা হয়। একিসঙ্গে সকল দেশকে আহবান জানাই মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার।"

কেবি/