আকস্মিক পরিবহন ধর্মঘটে দ্বিতীয় দিনেও অচল রাজশাহী

আকস্মিক পরিবহন ধর্মঘটে দ্বিতীয় দিনেও অচল রাজশাহী

রাজশাহীতে বিভাগীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে অঘোষিত বাস ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবারও সড়ক পথ অচল হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে সব রুটের পরিবহন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

তবে ঠিক কখন নাগাদ আবার বাস চলাচল শুরু হবে সে ব্যাপারে কেউ স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না।

সকালে রাজশাহী শিরোইলে থাকা ঢাকা বাস টার্মিনাল ও নওদাপাড়ায় থাকা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে- সবধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শিরোইল বাসটার্মিনাল থেকে প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবারও রাজশাহী থেকে ঢাকার পথে কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি।

অপরদিকে নওদাপাড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলাসহ কোনো রুটের বাস ছেড়ে যায়নি। তবে টার্মিনালগুলোতে বাস কাউন্টার খোলা রয়েছে।

এদিকে, আকস্মিক এ পরিবহন ধর্মঘটের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। কাল থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘট কবে এবং কখন নাগাদ শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না কেউই।

এদিকে উন্মুক্ত তিনটি স্থানের যে কোনো একটিতে যে কোনো মূল্যে বিভাগীয় সমাবেশ করার কথা ঘোষণা করেছে বিএনপি। সোমবার দুপুরে রাজশাহীর একটি কনভেনশন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।

অন্যদিকে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায় রাজশাহী মহানগর পুলিশ নগরীর মাদ্রাসা মাঠ সংলগ্ন নাইস কনভেনশন হল নামের একটি কমিউনিটি হলে বিএনপি রাজশাহী বিভাগীয় বিভাগীয় সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। আজ বিকালে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বিএনপির সমাবেশের আগেরদিন রাজশাহী থেকে বিভিন্ন আন্তঃজেলা রুটে আকস্মিকভাবে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে বাস মালিক সমিতি ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন।

বিএনপি বলছে, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ উপলক্ষে নেতাকর্মীদের চলাচল বন্ধ করতেই পরিকল্পিতভাবে পরিবহন বন্ধ করা হয়েছে।

বিভাগীয় সমাবেশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুশ তালুকদার দুলুসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ বক্তব্য তুলে ধরেন।

বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, বিএনপি গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মহানগর পুলিশের কাছে বিভাগীয় সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল। পুলিশ নানা টালবাহানা করে একটি কমিউনিটি হলে সোমবার দুপুরে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে যা বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপি পূর্ব পরিকল্পনা ও ঘোষণা অনুযায়ী নগরীর মনি চত্বর, সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট অথবা গণকপাড়া এলাকায় সমাবেশ করবে। পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের সমাবেশ স্থলে বাধা দিলে প্রতিরোধ করা হবে।

মিনু আরও বলেন, বিএনপি দেশের সর্ববৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল। বিএনপিকে সমাবেশ করতে না দেওয়া স্বৈরাচারী আচরণ ছাড়া আর কিছু নয়। এখনো রাজশাহী বিএনপির ঘাঁটি। হাজার হাজার নেতাকর্মী সব বাঁধা উপেক্ষা করে সমাবেশে যোগ দেবেন বলে ঘোষণা করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুশ তালুকদার দুলু বলেন, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ পণ্ড করতে সরকার পরিকল্পিতভাবে রাজশাহী থেকে বিভিন্ন আন্তঃজেলা রুটে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে যাতে কেউ সমাবেশে অংশ নিতে না পারেন। রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীদেরকে বাস ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না বলে আমরা জানতে পেরেছি।

স্বৈরাচারী কায়দায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার সব চেষ্টা সরকার নিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি। একইসঙ্গে দ্রুত গণপরিবহন খুলে দেওয়ার দাবি করছি।

বিএনপি নেতা দুলু আরও বলেন, গণপরিবহণ বন্ধের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

তিনি বলেন, বিএনপি পূর্বঘোষিত তিনটি স্থানের যে কোনো একটি স্থানে যে কোনো মূল্যে বিভাগীয় সমাবেশ করবে। বাধা দেওয়া হলে বিএনপি নেতাকর্মীরা বাধা উপেক্ষা করেই সমাবেশস্থলে হাজির হবেন।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন ছাড়াও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র এডিসি গোলাম রূহুল কুদ্দুশ যুগান্তরকে জানিয়েছেন শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই বিএনপিকে মাদ্রাসা মাঠ সংলগ্ন নাইস কনভেনশান হলে বিভাগীয় সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছেন। উন্মুক্ত স্থানে সমাবেশ হলে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা থাকায় অনুমতি দিতে পারেনি পুলিশ।

এডিসি রুহুল কুদ্দুশ আরও বলেন, বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই তাদের বিভাগীয় সমাবেশের নতুন এই ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়েছে। পুলিশ সামর্থ্যানুযায়ী বিভাগীয় সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন বলেও জানিয়েছেন আরএমপির মুখপাত্র।

অন্যদিকে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের একদিন আগে রাজশাহী থেকে বিভিন্ন আন্তঃজেলা রুটে পরিবহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রবিবার সকাল থেকেই কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়াই মালিক সমিতি ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন বাস সার্ভিস বন্ধ রাখেন। ফলে দূর গন্তব্যে যেতে বাস টার্মিনাল বা নির্ধারিত স্থানে এসে সাধারণ মানুষ দেখতে পান বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে তাদেরকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

এদিকে গণপরিবহন বন্ধ নিয়ে বাস মালিক ও মোটর শ্রমিক নেতারা পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন।

রাজশাহী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটো বলেছেন, মঙ্গলবার বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় ও জানমালের ক্ষতির সমূহ আশঙ্কা থেকেই তারা একদিন আগে পরিবহন সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন। সমাবেশের আগে ও পরে হামলা পাল্টা হামলার মতো কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে বাস যানবাহন ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটে আগে। এ কারণে তারা ঝুঁকি নিচ্ছেন না। বাস বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। এতে যাত্রী সাধারণের ভোগান্তির জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাতাব হোসেন বলেছেন, সম্প্রতি বগুড়ায় তাদের শ্রমিকরা হামলার শিকার হয়েছেন। এর প্রতিবাদে তারা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। রাজশাহীর সঙ্গে বিভাগের আট জেলার যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখেছেন বলে জানিয়েছেন মোটর শ্রমিক নেতারা।

এমজে/