রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলা

ছাত্রলীগ নেতা রাসেলের নেতৃত্বে হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা

ছাত্রলীগ নেতা রাসেলের নেতৃত্বে হামলা চালায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা

সাবেক যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়িবহরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে হওয়া হামলার প্রায় আড়াই বছর পর চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পক্ষ থেকে সম্প্রতি আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের সন্দেহে ছাত্রলীগ নেতা নাইমুল হাসান ওরফে রাসেলের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই হামলা চালিয়েছিল বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছে পুলিশ।

আসামিরা হলেন- নাইমুল হাসান, ফিরোজ মাহমুদ, মীর আমজাদ হোসেন, মো. সাজু ইসলাম, রাজিবুল ইসলাম রাজু, শহিদুল আলম খান কাজল, তান্না ওরফে তানহা ওরফে মুজাহিদ আজমি তান্না, সিয়াম ও অলি আহমেদ ওরফে জনি। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে বলেন, বেশ কিছুদিন আগেই চার্জশিট অনুমোদন করা হয়েছে। সম্প্রতি আদালতে তা দাখিল করা হয়।

একই ধরনের তথ্য জানিয়ে ডিবির উপকমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের সন্দেহে ওই হামলার ঘটনা ঘটেছিল।

এদিকে, মূল অভিযুক্তকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। পুলিশ ঘটনার মুলহোতাকে বাঁচাতে চাইছে বলেও অভিযোগ বদিউল আলমের।

দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ৪ আগস্ট রাতে সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের ইকবাল রোডের বাসায় নৈশভোজের দাওয়াতে গিয়ে মার্শা বার্নিকাট এ হামলার শিকার হন। ওই রাতে নৈশভোজের নামে তিনি গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করছিলেন বলে খবর পায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। আনুমানিক রাত ১১টায় ছাত্রলীগের নাইমুল হাসান ওরফে রাসেলের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি দল ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা মার্শা বার্নিকাটের গাড়ি ধাওয়া করলে রাষ্ট্রদূত দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ সময় সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। দলটি বাড়ির জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে বদিউল আলম, তার স্ত্রী ও ছেলে মাহবুব মজুমদারকে জীবননাশের হুমকি দেয়। মাহবুবকে ধাক্কা দিয়ে আঘাত করেন। বাড়ির প্রধান গেট ধাক্কাধাক্কি করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা চলে যান।

এ ঘটনায় ওই বছর ১০ আগস্ট রাতে ড. বদিউল আলম মজুমদার বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ১৮ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আবদুর রউফ ডিবির পরিদর্শক (নিরস্ত্র) চার্জশিট দাখিল করেন।

চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠন সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড চালায়। ওই বছরের ৪ আগস্ট রাতে ড. কামাল হোসেন ও কয়েকজন মিলে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের ইকবাল রোডের ১২/২ নম্বর বাড়িতে যুক্তরাষ্ট্র রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের বিদায়ী নৈশভোজ আয়োজন করেন। ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং ড. কামাল হোসেন বিভিন্ন সময় সরকারের নানামুখী কঠোর সমালোচনা করে থাকেন। তারা দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও সংস্থার কাছে সরকারবিরোধী বিরূপ মন্তব্য করে থাকেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন।

প্রসঙ্গত, ঘটনার দিন বদিউলের বাসায় তৎকালীন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট ছাড়াও ড. কামাল হোসেন, তার স্ত্রী হামিদা হোসেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। তখন রাজধানীসহ সারা দেশে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চলছিল।