রানা প্লাজা ধসের ৫৯ মাস

মাসিক মজুরি ১৬ হাজার টাকা করতে হবে

মাসিক মজুরি ১৬ হাজার টাকা করতে হবে

সাভার, ২৩ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : মাসিক মজুরি ১৬ হাজার টাকার এক টাকা কম হলেও শ্রমিকরা মেনে নেবে না বলে দৃঢ় প্রত্যায় ব্যক্ত করেছেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। রানা প্লাজা ধসের ৫৯ মাস উপলক্ষে শুক্রবার সকাল ১০টায় সাভারে রানা প্লাজার সামনে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের অংশগ্রহণে ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্যকালে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।

মানববন্ধনে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতারসহ আরো বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, কেন্দ্রীয় সদস্য এফ এম নূরুল ইসলাম, আশুলিয়া থানা শাখার সভাপ্রধান বাবুল হোসেন, সাভার শাখার সম্পাদক আলম মাতব্বর, রূপালী আক্তার, রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিক ফজলে রাব্বির মা রাহেলা বেগম, সত্যজিৎ দাসসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সাভার শাখার সভাপ্রধান সিরাজ ফকির।

গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, আগামী মাসের ২৪ এপ্রিল হবে রানা প্লাজা ধসের পাঁচ বছর। ওই ঘটনা সারা দুনিয়ার কারখানার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা এবং সবেচেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিক হত্যার ঘটনা হলেও গত পাঁচ বছরে এর বিচার প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। ভবন নির্মাণ আইনে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও হত্যা মামলার কোনো অগ্রগতি নেই।

তাসলিমা আখতার বলেন, রানা প্লাজায় এক হাজার ১৭৫ জনেরও অধিক শ্রমিকের জীবন হারানো- কোনো দুর্ঘটনা নয়, রীতিমতো পরিকল্পিত হত্যা। ফাটল দেখা যাওয়ায় সবাই ভবন পরিত্যাগ করলেও শ্রমিকদেরকে জোর করে ঢোকানো হয়েছিল রানা প্লাজা নামক মৃত্যুকূপে। ফলে এই হত্যার দায় নিতে হবে ভবনমালিক সোহেল রানাসহ, সরকারি কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী যারা মৃত্যুকূপের পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন, কারখানার মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে। বিচার প্রক্রিয়া প্রলম্বিত করার ভেতর দিয়ে প্রকারান্তরে রানা প্লাজার ইতিহাসকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে।

কী কারণে, কার স্বার্থে সোহেল রানাসহ সকল দোষীদের বিচার প্রক্রিয়া স্থবির করে রাখা হয়েছে প্রশ্ন রেখে তাসলিমা বলেন, রানা প্লাজা বা তাজরীনের শ্রমিক হত্যার অভিযোগে অভিযুক্তদের যদি বিচার না হয়, তাহলে রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থাই একটি বিরাট প্রশ্নের মুখে পড়ে। অবিলম্বে সোহেল রানাসহ সকল দোষীদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেন তিনি।

মানববন্ধনে অন্য নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ৪৪ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিক জানিয়ে দিয়েছে ১৬ হাজার টাকা মজুরি ছাড়া এই শিল্প টিকিয়ে রাখা যাবে না। শ্রমিকদের অনাহারে-অর্ধাহারে, অপুষ্টিতে রেখে কোনোভাবেই এই শিল্প এগিয়ে যেতে পারে না। মালিকদের উদ্দেশ্য করে বক্তারা বলেন, আপনারা বিশ্ব প্রতিযোগিতার কথা বলবেন, উৎপাদনশীলতার কথা বলবেন, ৫০ বিলিয়ন ডলারের স্বপ্ন দেখবেন আর শ্রমিকদের মজুরির প্রশ্ন আসলে পেছন দিকে হাঁটবেন এটা হতে পারে না।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিরাট জাঁকজমক করে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার উদযাপন করলেন, এসডিজি অর্জন করার স্বপ্ন দেখছেন, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীসহ সকল মন্ত্রী-এমপি এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছেন, কিন্তু শ্রমিকদের মজুরির প্রশ্ন আসলে সেখানে এতো গড়িমসি কেন? শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত করে দেশ কোনোভাবেই এগিয়ে যেতে পারে না। নিম্নতম মজুরি বেসিক ১০ হাজার এবং মোট ১৬ হাজার টাকার ‌এক টাকা কম হলেও এবার শ্রমিকরা তা মেনে নেবেনা বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন নেতৃবৃন্দ।

(জাস্ট নিউজ/একে/২২০১ঘ.)