জবিতে টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগের হাতাহাতি

‘স্যার এক গ্রুপ নিয়ে মিটিং করলে হবে? আমরাও তো আছি’

‘স্যার এক গ্রুপ নিয়ে মিটিং করলে হবে? আমরাও তো আছি’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নির্মাণাধীন নতুন ক্যাম্পাসের টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে।

প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারি বলেন, “কল দিয়ে কয়েকজন ছাত্র আমার সঙ্গে আজ দেখা করতে চায়। আমি আমাদের টেন্ডারের মিটিং শেষ করে বেলা ১২টার দিকে রুমে এলে তারা সাত-আটজন আমার রুমে প্রবেশ করে। এ সময় তারা নিজেদের ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদের নেতা বলে পরিচয় দেয় এবং টেন্ডারের বিষয়ে কথা বলে। তারা বলে যে ‘টেন্ডার হলে আমাদের দিকে একটু খেয়াল রাখিয়েন।’ আমি বলেছি এখনো অনেক কাজ বাকি এটা নিয়ে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে তারপর জানা যাবে কাজ কে পেয়েছে। সুতরাং এটা নিয়ে এখনই কিছু করা বা জানানোর সময় হয়নি।

এ সময় ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ সংখ্যায় এদের চেয়েও বেশি হবে, তারা বলে, ‘স্যার এক গ্রুপ নিয়ে মিটিং করলে হবে? আমরাও তো আছি।’ তখনই টেন্ডার নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে আমি তাদের বের হয়ে যেতে বলি। এ সময় তাদের দুইপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসে উভয়পক্ষকে শান্ত করেন।”

আজ কত টাকার টেন্ডার ছিল জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, প্রায় ৩০ কোটি টাকার ভলিয়ম ছিল এটি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের ২০০ একর জমির সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য ই-টেন্ডার জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল আজ। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে আজ দুপুর ১২টার দিকে জবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসনে মোবারক রিশাদ ও নাজমুল ইসলাম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান, সাবেক দপ্তর সম্পাদক শাহবাজ হোসেন বর্ষণ, সাবেক সহ-সম্পাদক রিফাত সাঈদ ও আনোয়ার সজীব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ সেখানে প্রবেশ করেন। তারা ছাত্রলীগের জবি শাখার সাবেক সহসভাপতি আশরাফুল ইসলাম টিটন ও জামাল উদ্দিন কর্মী বলে পরিচিত। প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে প্রবেশের পরপরই দুই পক্ষের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও বাকবিতণ্ডা শুরু হলে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

এ বিষয়ে জবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হোসনে মোবারক রিশাদ বলেন, ‘করোনার জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই সকালের দিকে আমরা কয়েকজন মিলে ক্যাম্পাসে যাই। বিভিন্ন দপ্তরে আমাদের পরিচিতদের সঙ্গে দেখা করি। দুপুর ১২টার দিকে প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষে ঢুকে কথা বলার সময় আশরাফুল, জামালের গ্রুপের কর্মীরা হুট করে রুমে আসে। এ সময় টেন্ডারের কথা বলে আমাদের সঙ্গে হট্টগোল শুরু করে।’

জবি ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক শাহবাজ হোসেন বর্ষণ বলেন, ‘আমরা প্রধান প্রকৌশলীর রুমে পরিচিত হওয়ার জন্য গেলাম। তার কিছুক্ষণ পর কিছু জুনিয়র রুমে ঢুকে উত্তেজিত কথা বলে। তখন আমরা তাদের শান্ত করার চেষ্টা করি।’

কারা গেছেন জানতে চাইলে বর্ষণ বলেন, সাবেক সহসভাপতি আশরাফুল ইসলাম টিটন ও জামাল উদ্দিন ভাইদের কর্মী।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি গত পরশুদিন ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের একটি অংশ সিনিয়রদের না জানিয়ে ক্যাম্পাসে মাস্ক বিতরণ করেছে। তারাই আজ আবার ক্যাম্পাসে গেলে জুনিয়ররা তাদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয় এবং ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে প্রক্টর অফিসের লোকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’

জবির ২০০ একর জমির সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য ই-টেন্ডার জমার কোনো বিষয় আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমার জানা নেই। তবে থাকতেও পারে। কারণ করোনার মধ্যে তাহলে তারা কেন ক্যাম্পাসে গেলেন।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষে হট্টগোল করছে জেনে আমরা দ্রুত সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। উভয়পক্ষকে বলেছি, শান্ত থাকতে। ক্যাম্পাসে কেউ এ নিয়ে ঝামেলা করলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ছাত্রলীগে কোনো টেন্ডারবাজের জায়গা নেই। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’