চিকিৎসকদের হয়রানি: ডিএমপির বিবৃতি, ফেসবুকে পুলিশ কর্তাদের স্ট্যাটাস

চিকিৎসকদের হয়রানি: ডিএমপির বিবৃতি, ফেসবুকে পুলিশ কর্তাদের স্ট্যাটাস

করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ পরিস্থিতি ঠেকাতে সারা দেশে কঠোর লকডাউন দিয়েছে সরকার।এই লকডাউন কার্যকর করতে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।সরকারের নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারী এবং অকারণে বাহিরে বের হওয়া নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।কিন্তু এর মধ্যে বেশকিছু অভিযোগও উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

লকডাউনের প্রথম দিন পুলিশের চেকপোস্টে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন কিছু চিকিৎসক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়ে যায়।এছাড়া তাদের স্ট্যাটাস গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয়।এতে পুলিশ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে।

এর প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (১৫ এপিল) রাতে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।বিবৃতি বলা হয়, যাতায়াতের সময় যারা আইডি কার্ড দেখাতে পারেননি, তাদের যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। পুলিশ মনে করে, চলমান বিধিনিষেধের পরিপ্রেক্ষিতে এটি করা যৌক্তিক।

এ ছাড়া চিকিৎসক হয়রানির অভিযোগের বিষয় নিয়ে পুলিশের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছেন।ফেসবুকে তারা স্ট্যাটাস দিয়েছেন।সেখানে তারা বলছেন, পুলিশের অসদাচরণের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেওয়ার পরপরই অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন কর্মকর্তারা। কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায়নি কোনো কোনো স্ট্যাটাসদাতাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন পুলিশ কর্মকর্তা লিখেছেন, ‌‌ডাক্তার ও পুলিশের মধ্যকার ঐতিহ্যগত সুসম্পর্ক নষ্ট করার জন্য একটি মহল সর্বদাই ক্রিয়াশীল। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মহলটি আরও বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে।

ডিএমপির ওই বিবৃতিতে বলা হয়, কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো কোনো ব্যক্তি পুলিশের নিরাপত্তাচৌকিতে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিষয়টি ঢাকা মহানগর পুলিশের নজরে এসেছে। একটি ঘটনায় দেখা যায়, কারওয়ান বাজারে পুলিশ একজন গাড়িচালকের কাছে তার বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চান। চালক বলেন, গাড়িটি একজন চিকিৎসকের। কিন্তু চিকিৎসক ওই সময় গাড়িতে ছিলেন না। গাড়িচালককে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হলেও তিনি ব্যর্থ হন। পুলিশ এরপর গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চায়। গাড়ির কাগজপত্রে মালিক হিসেবে যার নাম উল্লেখ আছে, তার সঙ্গে ওই চিকিৎসকের নাম-ঠিকানা মেলেনি। ফলে গাড়িচালকের বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

জাহাঙ্গীর গেট এলাকার একটি ঘটনা সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই চিকিৎসক নিজের বাসা থেকে হাসপাতালের দিকে রওনা হওয়ার পর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণিসহ বেশ কয়েকটি নিরাপত্তাচৌকিতে আটকান। এতে তাঁর হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। জাহাঙ্গীর গেটের কাছে নিরাপত্তাচৌকিতেও তিনি ৩০ সেকেন্ডের মতো আটকে ছিলেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোভিড মহামারির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তা মেনে চলা সব নাগরিকের সমান দায়িত্ব। এসব বিধিনিষেধের বাস্তবায়নে পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনে ডিএমপি অঙ্গীকারবদ্ধ। কোনো পুলিশ সদস্য যেন কোনো অপেশাদার আচরণ না করেন, সে জন্য সব সময় তার আচার-আচরণ নজরদারিতে রাখা হয়। যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে তাদের উদ্বুদ্ধ করা ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চলছে। ডিএমপি পুলিশের কাজে নাগরিকদের সার্বিক সহায়তা করার অনুরোধ করেছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) মো. আবদুর রাজ্জাক তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন,‍ আমার জানামতে, চিকিৎসক বলে পরিচয়দানকারী একজন ব্যক্তি তার ফেসবুকের স্ট্যাটাসে বলেছেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন অধিক্ষেত্রের জাহাঙ্গীর গেট এলাকার চেকপোস্টে পুলিশ তার গাড়ি থামিয়ে তাকে নাকি অপমান করেছিল। পুলিশ সদস্যরা তার পরিচয় পেয়ে ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে তাকে নাকি ‘কসাই’ বলে গালি দিয়েছিল।

আবদুর রাজ্জাক আরও লেখেন, কথিত ডাক্তারের ফেসবুক স্ট্যাটাস মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়ে, যা পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলেরও নজরে আসে। এ ধরনের অভিযোগগুলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পর্যালোচনা করেন ও সংশ্লিষ্ট চেকপোস্টগুলোতে কর্তব্য পালনকারী দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের তলব করে তাদের কাছ থেকে অভিযোগের বিস্তারিত শোনেন।বলাবাহুল্য, ঢাকার জাহাঙ্গীর গেট দিয়ে যারা চলাচল করেন, তারা মূলত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকেন কিংবা সমাজের উচ্চ শ্রেণির নাগরিক হন। তাই সাধারণভাবে উচ্চতর পেশাদারি মনোভাবাপন্ন অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসারদেরই এসব স্থানে মোতায়েন করা হয়।সংগত কারণেই ওই এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের অপেশাদার আচরণ আশা করা হয় না। তারপরও ঘটনার পরপরই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলেরা পুলিশের বড় কর্তাদের তোপের মুখে পড়েন। তাদের কাছ থেকে সামনাসামনি কৈফিয়ত তলব করা হয়। একই সঙ্গে কথিত ‘কসাই’ বলে গালি খাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্ট্যাটাসদাতা চিকিৎসককে ফোন করে তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু স্ট্যাটাসদাতা পুলিশের ফোন ধরেননি।

বিষয়টির প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুলিশের দায়িত্বশীলেরা জানতে পারেন যে ওই চিকিৎসক তার কর্মস্থলে যাওয়ার সময় চার-চারটি পুলিশ চেকপোস্টের মুখে পড়েছিলেন। সব পুলিশ পোস্টেই তাকে পরিচয়পত্র দেখাতে হয়, ডাক্তার হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে হয়। হয়তো পুলিশের চেকপোস্টে বারবার পড়ে তিনি বিরক্ত হয়েছিলেন। তাই মনের দুঃখে-ক্ষোভে একটা কিছু লিখে ফেলেছিলেন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ডাক্তার ভাই বা বোনদের কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে বাংলাদেশ পুলিশ কোনোভাবেই বাধা নয়, বরং সহযোগী বন্ধু। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ পুলিশ যৌক্তিক কারণ ছাড়া আপনাকে বাধাগ্রস্ত করছে না। আর যদি বাধাগ্রস্ত করেই ফেলে, তবে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার বা সহকারী কমিশনারকে ফোন দিন (ইন্টারনেটে/অ্যাপে নম্বর আছে)।