রক্ত-বমির ওপর পড়েছিলেন তারেক শামসুর রেহমান

রক্ত-বমির ওপর পড়েছিলেন তারেক শামসুর রেহমান

ঢাকার উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে রাজউকের আবাসিক প্রকল্পের দোলনচাঁপা ভবনের ১৩০৪ নম্বর ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক, কলাম লেখক ও রাজনীতি বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমান। শনিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে নিজের বেডরুমের অ্যাটাচড বাথরুমের সামনে মেঝেতে রক্ত ও বমির ওপর মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন তিনি। নিথর দেহের আশপাশেও ছিল অনেক রক্ত।

দুপুরে তার মরদেহ উদ্ধারের পর প্রতিবেশী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০টার কিছু পরে ড. রেহমানের গৃহকর্মী প্রথমে এসে কলিংবেল বাজান। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ভবনের নিরাপত্তাকর্মীকে ডেকে নিয়ে আসেন তিনি। পরে গৃহকর্মী ও নিরাপত্তাকর্মীও অনেকবার বেল বাজিয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে আশপাশের ফ্ল্যাটের লোকজনকে ডেকে নিয়ে আসেন। আশপাশের লোকজনও কোনো সাড়া না পেয়ে তুরাগ থানা পুলিশকে খবর দেয়।

পরে দুপুর ১২টার পর তুরাগ থানা পুলিশের একটি দল এসে ড. তারেক শামসুর রেহমানের ১৩০৪ নম্বর ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। বেডরুমে ঢুকেই অ্যাটাচড বাথরুমের সামনে ড. রেহমানের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন পুলিশ সদস্যরা। পরে তার মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের বর্ণনা অনুযায়ী, বাথরুমের দরজার সামনে বমির ওপর পড়েছিল ড. রেহমানের মরদেহ। তার পা দু’টি ছিল বাথরুমের ভেতর ও বাকি শরীর ছিল দরজার সামনে। তার পরনে ছিল সাদা রঙের সেন্ডো গেঞ্জি ও কালো রঙের প্যান্ট। ডান পায়ে একটি মোজাও পরেছিলেন তিনি। এছাড়া তার মরদেহের আশপাশে অনেক রক্তও দেখতে পান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

প্রতিবেশী মাহমুদুর হোসেন রাসেল বলেন, ‘আমরা এসে দরজায় অনেক ধাক্কাধাক্কি করেও স্যারের সাড়া পাইনি। পরে পুলিশকে জানালে তারা এসে স্যারের ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তখন পুলিশের সঙ্গে আমরাও ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে গিয়ে দেখতে পাই—স্যারের মরদেহ বাথরুমের দরজার সামনে বমি ও রক্তের ওপর পড়ে আছে।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সাত বছর ধরে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। আমি স্যারকে একাধিকবার শ্বাসকষ্টের জন্য ওষুধ এনে দিয়েছি। আমরা ধারণা করেছি—স্যার হয়তো সাহরির সময় ঘুম থেকে উঠেছিলেন, তখন হার্ট অ্যাট্যাক করেছে তার।’

ড. তারেক শামসুর রেহমানের খালাতো ভাই বদরুল আলম বলেন, ‘ড. রেহমানের স্ত্রী এবং এক কন্যা সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। এই ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন। তার স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। এছাড়া তার আপন ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী করণীয় আমরা ঠিক করব। তবে আমার জানা মতে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।’

ডিএমপির উত্তরা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) শচীন মল্লিক বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি—অধ্যাপক শামসুর রেহমানের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। তবে আমরা সব বিষয়কে সামনে রেখেই তদন্ত করছি। সিআইডির ক্রাইম সিন এসে আলামত সংগ্রহ করেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হবে।’

ময়নাতন্তের প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে বলা যাবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।