আ’লীগের ২ গুরুপের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র সাতক্ষীরা, আহত ৫০

আ’লীগের ২ গুরুপের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র সাতক্ষীরা, আহত ৫০

সাতক্ষীরা, ২৭ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছে অন্তত অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী।

সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের (নিউমার্কেট চত্ত্বর) শহীদ আলাউদ্দিন চত্বরে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে এ ঘটনা ঘটে।

প্রায় আধা ঘণ্টা ব্যাপী চলা সংঘর্ষে গোটা নিউমার্কেট এলাকা রণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। জীবন ভয়ে স্থানীয় দোকানদাররা পালাতে থাকে। সংঘর্ষে ব্যবহার লোহার রড, হকিস্টিক, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে প্রতিপক্ষের উপর হামলা করা হয়। পরে একটি গ্রুপ প্রতিকার চেয়ে সাতক্ষীরা সদর থানা ঘেরাও করে। এ ঘটনায় গোটা শহর জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহরে মহড়া দেয় সরকার দলীয় লোকজন।

সংঘর্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনছুর আহম্মেদসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। এসময় সাতক্ষীরা সদর এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী মুজিবর রহমান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এম শওকত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান আলীসহ জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কিছু নেতা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান, জেলা যুবলীগের সদস্য মীর মহিতুল আলম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাজী আক্তার হোসেন, জেলা তাতী লীগের সভাপতি মীর শাহিন, যুবলীগ নেতা বাবু ও ছাত্রলীগ নেতা তৌকিরসহ অনেকে। আহতদের মধ্যে কয়েক জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সংঘর্ষে ৮নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মিলন হোসেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমান ও তৌকিরের অবস্থা আশংকাজনক। এ ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাতক্ষীরা সদর থানা ঘেরাও করে হামলাকারী যুবলীগ নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

পৌর যুবলীগের আহবায়ক এম এ কাদির বলেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিকালে সাতক্ষীরা নিউ মার্কেট সংলগ্ন আলাউদ্দিন চত্বরে পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা চলছিল। এ সময় জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে একটি মিছিল সেখানে উপস্থিত হয়। সভাস্থলে পৌছে মান্নান স্টেজে উঠে মাইক কেড়ে নিয়ে বলে আজ থেকে খেলা শুরু। আমার বিরুদ্ধে যারা মিছিল মিটিং করছে, তাদেরকে এখন খেলা দেখাবো। এতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তাতী লীগের সভাপতি প্রতিবাদ করলে মান্নানের নেতৃত্বে মঞ্চে থাকা অতিথিদের উপর হামলা চালানো হয়।

এদিকে জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নান পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, আলোচনা সভায় আমি বক্তব্য রাখছিলাম। তখন সদর এমপি সাহেবের ভাই যুবলীগের সদস্য মীর মহিতুল আলম মঞ্চের নিচে হট্টগোল করতে থাকে। তখন আমার নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ করলে মহিতুল আলম আমাকে চেয়ার ছুড়ে মারে। পরে তারা লোহার রড, হকিস্টিক, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমার নেতাকর্মীর উপর হামলা করে।

সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম রেজা জানান, ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ মিছিল নিয়ে নিউ মার্কেট এলাকার কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার প্রাক্কালে বসুন্ধরা মার্কেটের সামনে মান্নান, তুহিন ও মনোয়ার হোসেন অনুর নেতৃত্বে লোহার রড, হকিস্টিক, রাম নিয়ে তাদের উপর হামলা চালানো হয়। এতে তাদের কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকুর রহমান ও তৌকিরের অবস্থা আশংকাজনক।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মারুফ আহমেদ জানান, আওয়ামী লীগের কর্মসূচির ব্যাপারে আমাদের আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। শহীদ আলাউদ্দিন চত্বরে স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি চলছিল তখন জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে একটি মিছিল পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন দুই গ্রুপের হাতাহাতি হয়। ঘটনা শুনে পুলিশ দ্রুত সেখানে পৌছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এখন সবকিছু স্বাভাবিক।

প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, জেলা যুবলীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান বক্তব্য দিতে গিয়ে হঠাৎ উস্কানিমূলক বক্তব্য শুরু করেন। এ সময় (জেলা যুবলীগের) তার প্রতিপক্ষের লোকজন প্রতিবাদ করলে মান্নান সমর্থকেরা তাদের উপর হামলা চালায়। তারা লোহার রড, লাঠি, দা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার বিকেলে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা জেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। তারা বেশ কিছু অভিযোগ তুলে অবিলম্বে আব্দুল মান্নানকে বহিস্কারের দাবি জানান।

দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, মান্নানের বিরুদ্ধে ওই প্রতিবাদ সমাবেশ করার কারণে মান্নান ও তার সমর্থকেরা চরম ক্ষুব্ধ। এ ছাড়া বেশ কিছুদিন আগে থেকে জেলা যুবলীগের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো। এসব কারণে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০২৫ঘ)