ফেসবুক লাইভে বড় বোন তানিয়া: মুনিয়া আত্মহত্যা করতে পারে না

ফেসবুক লাইভে বড় বোন তানিয়া: মুনিয়া আত্মহত্যা করতে পারে না

সোমবার গুলশানে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে আসামি করা হয়েছে। মামলার বাদী মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) রাতে ফেসবুক লাইভে আসেন। সোমবারের দু-একদিন আগেই হয়তো মুনিয়া মারা গিয়েছিলেন এরকম ধারণা অনেকে করলেও তানিয়া জানান, সোমবার সকালেও মুনিয়ার সাথে তার কথা হয়েছিল। এছাড়া আরো কিছু বিষয়ে স্পষ্ট কথা বলেছেন তিনি।

যেভাবে পাওয়া গেলো মুনিয়ার লাশঃ

সোমবার সকালেও ওর সাথে কথা হয়। ঘুম ভাঙ্গে কান্নার শব্দে। মুনিয়া বলে, আপু আনভীর আমাকে ধোঁকা দিয়েছে। আমি বলেছিলাম চলে আসো, তুমি রেডি হও, আপু তোমাকে নিয়ে আসবো কুমিল্লায়।

কিন্তু ও আনভীরের সাথে যখন যায় তখন আমি ওকে অনেক বকাঝকা করেছিলাম, অনেকদিন ওর সাথে আমি কথা বলিনি, তাই সে লজ্জা পাচ্ছিল কীভাবে আমার কাছে আসবে!

সাড়ে ১০ টা বা ১১ টার দিকে সে আবার ফোন করে বলে, আপু তোমরা কখন আসবা? আপু, আমার অনেক বিপদ। আমাদের ঢাকা পৌঁছতে সোয়া চারটা বেজে যায়। এর মধ্যে যাওয়ার আগে অনেকবার ফোন করেছি তাকে। অগুণিতবার। আমার সাথে থাকা দুই কাজিনও ফোন করেছে অনেকবার। মুনিয়া ফোন ধরেনি।

গুলশানের বাসায় পৌঁছে দরজা নক করি প্রায় ঘণ্টাখানেক, কলিংবেল নষ্ট হয়ে গেছে। নিচে গিয়ে ইন্টারকম থেকে ফোন করা হয়, কেউ ফোন ধরে না। ওই বিল্ডিং এর ম্যানেজার তালা ভাঙ্গার লোক আনে। ভাঙ্গার সময় জোরে শব্দ হলেও ভেতর থেকে কোনো শব্দ না আসায় আমরা খুব ভয় পাচ্ছিলাম। তারপর...

এক লাখ টাকার ফ্ল্যাট ভাড়া এবং আনভীরের সাথে প্রেমে পরিবারের ভূমিকাঃ

আমি অনেক চেষ্টা করেছি এ নিয়ে তাকে বুঝানোর। সে বুঝেনি। সে আনভীরের ভালোবাসায় এতোটাই অন্ধ ছিল যে আমার ভালোবাসা তার কাছে কিছু ছিল না। আমি পারিনি তাকে ঠেকাতে। মার্চে যখন ওই বাসায় উঠে তখন বলেছিল, পরীক্ষা দেবে, আমাকে ও মিথ্যা বলেছিল। আসলে আনভীর ওকে বলেছিল বিয়ে করবে। বিয়ে করে বিদেশে সেটেল্ড হবে। আমাকে মুনিয়া বলেছিল, আপু বিয়ের বিষয়টা গোপন রাখতে হবে, নইলে সমস্যা হবে।

আনভীরকে সন্দেহের কারণঃ

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে আনভীর ও বাসায় যেতো। পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করেছে। তাছাড়া সারা বাসায় এখানে-সেখানে আনভীর আর ওর একসাথে ছবি আছে। মুনিয়ার ডায়েরিতেও বিস্তারিত লেখা আছে। ও মারা যাবার আগে আমি সেগুলো পড়িনি। তবে এগুলোতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা আছে।

ফাঁস হওয়া অডিও- মুনিয়ার কাছে আনভীরের ৫০ লক্ষ টাকা দাবিঃ

কখনোই না। মুনিয়ার সাথে আনভীরের কোনো টাকাপয়সার লেনদেন ছিল না। আনভীর মুনিয়াকে দূরে ঠেলে দেবার জন্যই হয়তো এই মিথ্যা কথা বলে চাপ দিয়েছে যেনো মুনিয়া দূরে চলে যায়।

এক চিত্রনায়কের সাথে প্রেম বিষয়ে...

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে পোস্ট করছেন, ঢাকাই সিনেমার এক চিত্রনায়কের সাথেও মুনিয়ার প্রেম ছিল। এ বিষয়ে তানিয়া বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। একটি মহল এটা ছড়াচ্ছে।

মুনিয়া আনভীরকে ভালোবাসতো?

আনভীরকে ও প্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিল। ও ভালো আঁকতো। ওর হাতে পর্যন্ত 'A' এঁকে রাখতো। আনভীর ওর সাথে প্রতারণা করেছে, মুনিয়াতো ওকে মন থেকেই ভালোবেসেছিলো। ফোনে আমাকে বলেছিল, আপু ওর জন্য ১০০ মেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। আমার বোনের মধ্যে ভালোবাসা ছিল, লুচ্চামিটা ছিল না।

আত্মহত্যা কিনা নিশ্চিত?

না নিশ্চিত নই। মুনিয়া আত্মহত্যা করতে পারে না। দরজা ভেঙ্গে আমরা প্রথমে ওর লাশ দড়িতে ঝুলানো দেখেতো আত্মহত্যাই ভেবেছিলাম। কিন্তু পুরো ঘর আমি দেখেছি। সাজানো গুছানো, পরিপাটি ছিল। মনে হচ্ছিল কেউ সেট করে রেখে দিয়েছে। তাছাড়া 'আত্মহত্যা'য় ব্যবহৃত টুলটা যেভাবে রাখা ছিল তাতেও আত্মহত্যা মনে হয় নি। পুলিশ তো আমাদের চেয়ে অভিজ্ঞ। তারা ভালো বলতে পারবে। মুনিয়া আমার ছোটবোন, আমার সন্তান। মুনিয়া আত্মহত্যা করতে পারে না। এটা হত্যাকাণ্ড। এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আমার বোনটাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।