মিতু হত্যা: 'প্রেমিকা' গায়ত্রীকে নিয়ে বাবুলের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ

মিতু হত্যা: 'প্রেমিকা' গায়ত্রীকে নিয়ে বাবুলের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ

পরকীয়া প্রেমের জের ধরেই মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হয়েছে এবং এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে নিহতের স্বামী ও সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আকতার। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।

চট্টগ্রামে মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যার অভিযোগে স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আকতার-এর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তাঁর শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। বুধবার (১২ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। জামাই বাবুলকে প্রধান আসামি করে ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নিহত মিতুর বাবা। আগের মামলার আসামিদের এই মামলায় হত্যাকাণ্ডের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দুপুর ২টার দিকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের আদালতে তাকে আনা হয়। এই সময় ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার এজাহারে বাবুল আক্তারের সঙ্গে এনজিও কর্মী গায়ত্রী অমর শিংয়ের পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, এ কারণেই পারিবারিক কলহে স্ত্রী মিতুকে হত্যা করা হয়েছে।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কক্সবাজার জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত থাকার সময় ২০১৩ সালে এনজিও কর্মী গায়ত্রী অমর শিংয়ের সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন বাবুল। এই নিয়ে মিতুর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। এসময় মিতুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন বাবুল। এরমধ্যে ২০১৪ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সুদানে জাতিসংঘ শান্তিমিশনে সুদানে ছিলেন বাবুল আকতার। এই সময় তাঁর মোবাইল ফোনটি চট্টগ্রামের বাসায় ছিলো। ওই মোবাইল ফোনে সেসময় মোট ২৯ বার ম্যাসেজ দেন গায়ত্রী অমর শিং।

এরই মধ্যে বাবুল আকতারকে গায়ত্রী অমর শিংয়ের উপহার দেওয়া দুটি বই পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি বইয়ের তৃতীয় পৃষ্ঠায় গায়ত্রী নিজ হাতের লেখা রয়েছে '05/10/13, Coxs Bazar, Bangladesh. Hope the memory of me offering you this personal gift. shall eternalize our wonderful bond, love you. Gaitree.'

একই বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় ২৭৬ পরের পাতায় ১নং বিবাদী বাবুল আকতারের নিজের হাতে ইংরেজিতে গায়ত্রী'র সঙ্গে সাক্ষাতের বিবরণ লেখা আছে। তিনি লিখেছেন, 'First Meet : 11 Sep, 2013, First Beach walk : 8th Oct 2013, G Birth day : 10 October, First kissed : 05 October 2013, Temple Ramu Prayed together, 13 October 2013, Ramu Rubber Garden Chakaria night beach walk.'

মামলার বাদী এভাবেই বাবুল আকতার ও গায়ত্রী'র হাতের লেখা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন। এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, এই পরকীয়া প্রেমের কারণে বাবুল-মিতুর দাম্পত্য অশান্তি চরমে পৌঁছায়। বাবুল আকতারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে মিতু প্রতিবাদ করলে তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এই নির্যাতনের বিষয়টি মিতু বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, বাদী বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছেন গত ৬ জুন ২০১৬ তারিখে পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আকতার বাদী হয়ে যে হত্যা মামলাটি দায়ের করেছেন সেই মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাদী বাবুল আকতার জড়িত থাকার প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়ায় উক্ত মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর ওআর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এই ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়।

ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তাতে তিনি বলেন, তার জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকতে পারেন। তবে সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় মিতু হত্যার তদন্ত নতুন মোড় নেয়। অব্যাহতভাবে মিতুর মা–বাবা এই হত্যার জন্য বাবুল আকতারকে দায়ী করে আসছেন।

পিবিআই আজ জানায় মিতু হত্যায় বাবুল জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরপরই আগের মামলার চার্জশিট ও নতুন করে মামলা দায়ের হলো।-বাংলাভিশন