ভোগান্তি মাথায় নিয়েও ঘরে ফেরা হলো না তাদের

ভোগান্তি মাথায় নিয়েও ঘরে ফেরা হলো না তাদের

ঈদের আনন্দ অবশেষে বিষাদে পরিণত হলো ঘরমুখো পাঁচজনের পরিবারে। পথের শত ভোগান্তি মাথায় নিয়েও ঘরে ফেরা হলো না তাদের।

প্রচণ্ড ভিড়, গরম, রোদের তাপ আর অক্সিজেনের অভাবে ফেরির পাঁচ যাত্রী মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম।

আজ বুধবার বেলা সাড়ে ৩টায় বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘যেসব লোক ফেরিতে মারা গেছেন তাঁদের ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে উদ্ধার করেছেন। একটি ফেরিতে থেকে চারজন উদ্ধার করা হয়। সেখানে দুজন পুরুষ ও দুজন নারী ছিলেন। এর আগেও একই কারণে আরেকটি ফেরিতে একটি কিশোর মারা গেছে। লাশগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া গরমে, মানুষের ভিড়ে ও অক্সিজেনের ঘাটতি হওয়ায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। আহতদের শিবচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসে শাহ্ পরান নামের একটি ফেরি। অতিরিক্ত যাত্রীদের কারণে পদদলিত হয়ে মাঝপদ্মায় মারা যায় আনচুর মাতুব্বর (১৫)। পরে বেলা ১টার দিকে শিমুলিয়া থেকে প্রায় তিন হাজার যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসে ফেরি এনায়েতপুরী। অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে ওই ফেরিতে গাদাগাদির সৃষ্টি হয়। ফেরি থেকে নামতে গিয়ে যাত্রীদের চাপে ও পদদলিত হয়ে মারা যান ওই চার জন। এ সময় আহত হন অন্তত অর্ধশতাধিক যাত্রী।

নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কলিকাপ্রসাদ এলাকার মো. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. আনচুর মাতুব্বর (১৫), মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আলামীন ব্যাপারীর স্ত্রী নিপা বেগম (৪৫) ও বরিশালের মুলাদি উপজেলার চরকালিখান এলাকার এছহাক আকনের ছেলে নরুদ্দিন আকন (৪৬)।

মৃত নিপা আক্তারের ছেলে রিফাত হোসেন (১৪) জানায়, তার মা ফেরিতে থাকার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে ফেরি যখন ঘাটে ভিড়ে তখন লোকজন নামতে শুরু করে। এ সময় সেও ব্যাগ হাতে নেমে আসে। পন্টুনে নামার পর তার মাকে দেখতে না পেয়ে খুঁজতে থাকে ভিড়ের মধ্যে। লোকজন নেমে গেলে ফেরির ডেকে মৃত অবস্থায় তার মাকে পড়ে থাকতে দেখে সে।

আমির হোসেন নামের এক যাত্রী জানান, ফেরিতে প্রচুর ভিড়। ফেরির ডেকে বেশিরভাগ যাত্রী গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় দাঁড়িয়ে থেকে ফেরি বাংলাবাজার ঘাটে যাওয়া আগেই অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। লোকজনের ভিড়ে আমরা প্রায় শ্বাস নিতে পারছিলাম না। তার ওপর রোদের কড়া তাপ। অনেকেই পানির জন্য চেঁচামেচি করছিল।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসন নিহতদের দাফন-কাফনের জন্য বিশ টাকা করে অনুদান দেন।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শশাঙ্ক ঘোষ বলেন, ‘একসঙ্গে অনেকক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপাচাপির কারণেই এই দুর্ঘটনা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।’

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, ‘নারীসহ পাঁচজনের মৃত্যু গরম ও হিটস্ট্রোক থেকে হয়েছে। লাশগুলোর পরিচয় নিশ্চিতের কাজ চলছে। একজনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দুজনের নাম-পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।’