বাংলাদেশসহ দরিদ্র দেশগুলোতে টিকার সঙ্কট কঠিন আকার নিয়েছে-বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বাংলাদেশসহ দরিদ্র দেশগুলোতে টিকার সঙ্কট কঠিন আকার নিয়েছে-বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, বিশ্বে দরিদ্র দেশগুলোতে করোনা ভাইরাসের টিকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এসব দেশকে পর্যাপ্ত টিকা সরবরাহ দেয়া হয়নি। এমন দেশের সংখ্যা বিপুল। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ, উগান্ডা, জিম্বাবুয়ে, ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোর মতো দেশগুলোতে টিকা ফুরিয়ে গেছে। এসব দেশে টিকার সঙ্কট কঠিন আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিনিয়র উপদেষ্টা ড. ব্রুস আইলওয়ার্ড বলেছেন, কোভ্যাক্স কর্মসূচির মাধ্যমে ১৩১ টি দেশকে সরবরাহ দেয়া হয়েছে ৯ কোটি ডোজ টিকা। কিন্তু বিশ্বে যেভাবে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে তা থেকে এসব দেশের জনগণকে রক্ষা করার জন্য এই টিকা পর্যাপ্ত নয়। আফ্রিকার কিছু দেশে করোনা ভাইরাস যখন তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আঘাত করছে সে সময়ে এই সতর্কবাণী দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সাইরিল রামাফোসা অন্য দেশকে টিকা দেয়া বন্ধ করার আহবান জানিয়েছেন। কারণ, তার দেশেই করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মহাদেশ পর্যায়ে এ পর্যন্ত আফ্রিকায় মাত্র চার কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। সেখানে মোট জনসংখ্যার শতকরা ২ ভাগেরও কম মানুষ এই টিকা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন রামাফোসা। এই সমস্যার সমাধান করতে তার সরকার কোভ্যাক্সের সঙ্গে আঞ্চলিক পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় অধিক পরিমাণ টিকা উৎপাদনের বিষয়ে কথা বলছে। এর মধ্য দিয়ে টিকা উৎপাদনের আঞ্চলিক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিবেচনা করতে চান তিনি।

উল্লেখ্য, গত বছর সারা বিশ্বে দরিদ্র দেশগুলোতে টিকা সরবরাহ করার জন্য সৃষ্টি করা হয় কোভ্যাক্স কর্মসূচি। এর নেতৃত্বে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তার সঙ্গে আছে আরো কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠন। কোভ্যাক্স কর্মসূচির মাধ্যমে ২০২১ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বজুড়ে ২০০ কোটি ডোজ টিকা বিতরণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাথমিকভাবে। এই টিকার বেশির ভাগই দেয়ার কথা দরিদ্র দেশগুলোকে। এসব দেশে টিকা বিতরণ করে কোভ্যাক্স কর্মসূচির মাধ্যমে কমপক্ষে শতকরা ২০ ভাগ মানুষকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার আশা করা হচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন খাতের সমস্যার কারণে বিঘ্ন ঘটছে কর্মসূচিতে। তা ছাড়া আছে বিতরণ ব্যবস্থায় বিঘ্ন। এ জন্য যেসব দেশ একেবারেই কোভ্যাক্সের ওপর নির্ভরশীল সেখানে টিকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ব্রিফিংয়ে ড. আইলওয়ার্ড স্বীকার করেছেন, টিকার এই সঙ্কট কঠিন আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেছেন, কোভ্যাক্সের সঙ্গে যুক্ত নিম্ন আয়ের ৮০টি দেশের মধ্যে অর্ধেকের বেশি দেশে টিকাদান কর্মসূচি সচল রাখার মতো পর্যাপ্ত টিকা নেই তাদের হাতে। কিন্তু বাস্তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। তিনি বলেছেন, টিকার সঙ্কট মেটাতে কিছু দেশ বিকল্প ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে টিকার বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য দিতে হয়েছে বা হচ্ছে।

টিকা নিয়ে যখন এমন টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে তখন কিছু ধনী দেশ তাদের উদ্বৃত্ত টিকা কোভ্যাক্সের মাধ্যমে বা অন্য উপায়ে দান করছে। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ঘোষণা করেছে তারা কিভাবে টিকা সঙ্কটে ভোগা দেশগুলোকে সাড়ে পাঁচ কোটি ডোজ টিকা দান করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এসব টিকার মধ্যে ৪ কোটি ১০ লাখ ডোজ বিতরণ করা হবে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। বাকি এক কোটি ৪০ লাখ ডোজ বিতরণ করা হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে ৫০ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কোভ্যাক্সের মাধ্যমে, এসব টিকা তার অন্তর্ভূক্ত নয়। বাইডেন এ মাসের শুরুর দিকে ওই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে। জি৭ সদস্যরা সবাই মিলে এ বছরের শেষ নাগাদ দরিদ্র দেশগুলোকে ১০০ কোটি ডলার দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।