লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি, বাড়ি ফেরার পথে কৃষকের মৃত্যু

লোকসান দিয়ে গরু বিক্রি, বাড়ি ফেরার পথে কৃষকের মৃত্যু

ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের কৃষক লতিফ শেখ (৫৯)। কোরবানির ঈদে বিক্রি করবেন বলে দীর্ঘ দিন ধরে একটি গরু লালন-পালন করছিলেন তিনি। এলাকায় গরুটির দাম উঠে ১ লাখ ৬ হাজার টাকা। কিন্তু আরও লাভের আশায় গরুটি নিয়ে ঢাকায় আসেন তিনি। অবশেষে মাত্র ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হন লতিফ শেখ।

ক্লান্ত শরীর ও বেদনা ভারাক্রান্ত মনে ফিরছিলেন বাড়িতে। পদ্মা নদী পাড়ি দেওয়ার সময় বসেছিলেন ট্রলারের ছাউনির উপর। চরভদ্রাসন উপজেলার হাজিগঞ্জ ঘাটে ট্রলারটি ভেড়ার আগ মুহূর্তে ছাউনি থেকে পানিতে পড়ে যান তিনি। কিন্তু বিষয়টি আশপাশের কেউ টের পায়নি। ট্রলারের সব যাত্রী নেমে যাওয়ার পর খোঁজ পড়ে তার। পরে আরেকটি ট্রলারের নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

বুধবার (২১ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের হাজিগঞ্জ ঘাটে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে।

লতিফ শেখ গাজিরটেক ইউনিয়নের বাঞ্ছারাম বিশ্বাসের ডাঙ্গী গ্রামের মৃত আব্দুল শেখের ছেলে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার কারণে হয়ত ভারসাম্য হারিয়ে একপর্যায়ে তিনি ঘাটের কাছে ট্রলারের ছাউনি থেকে নদীতে পড়ে যান। তার সহযাত্রীরা সেটি বুঝতে পারেননি। যখন বিষয়টি টের পাওয়া গেল তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।

ওই এলাকার বাসিন্দা চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কাওছার হোসেন বলেন, গত দুই বছর ধরে বাড়িতে একটা গরু লালন-পালন করে বড় করেন লতিফ। স্বপ্ন ছিল এবারের কোরবানির হাটে সেটি বিক্রি করে কিছু টাকা আয় করার। বাড়িতে গরু দেখতে আসেন অনেক ব্যবসায়ী। দাম ওঠে ১ লক্ষ ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবুও লতিফ শেখ গরুটি বিক্রি করেননি। গরুটি বেশি দামে বিক্রির আশায় তিনি গত সোমবার নিয়ে যান ঢাকায়। মঙ্গলবার সারাদিন ঢাকায় থাকার পরে গরুটি অবশেষে বিক্রি হয় মাত্র ৮০ হাজার টাকায়। যা আগের ওঠা দামের চেয়ে ২৬ হাজার টাকা কম। কম দামে গরুটি বিক্রি হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন লতিফ শেখ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লতিফ শেখসহ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী অবিক্রীত গরু ট্রলারে করে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। লতিফ শেখ ট্রলার থেকে সবার অজান্তে নিচে পড়ে যান। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় পদ্মা নদীতে আরেকটি ট্রলারের নিচ থেকে।

চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকারিয়া হোসেন বলেন, এ ঘটনায় মৃতের জামাতা হযরত আলী বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন। পরিবারের কোনো আপত্তি না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়েছে।

এমজে/