কঠোর লকডাউনে আকাশছোঁয়া রিকশা ভাড়া

কঠোর লকডাউনে আকাশছোঁয়া রিকশা ভাড়া

প্রথম দিনের লকডাউন বেশ কঠোরই হয়েছে। যারা জরুরি কোনো কারণ ছাড়া বাইরে বের হয়েছেন তারা শাস্তি ও জরিমানার মুখে পড়েছেন।

অনেকেই মনে আশা পুষে রেখেছিলেন যে হয়তো লকডাউন ২৩ জুলাইয়ে শুরু নাও হতে পারে। তাই অনেকেই ঈদে বাড়ি ছুটেছিলেন। কিন্তু সরকারে কঠোর সিদ্ধান্তে তাদের সেই আশা পুরণ হয়নি। তাই লকডাউনের শুরুর সকালে সদরঘাট ও ঢাকার বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ডে ছিলো বেজায় ভিড়। যে যেভাবে পারেন ঢাকায় ছুটে এসেছেন।

কিন্তু এলে কী হবে? একমাত্র রিকশা ও ভ্যান ছাড়া আর কোনো যানবাহন ছিল না। তাও সংখ্যায় খুবই কম। এই সুযোগে রিকশা চালকেরা ভাড়া দেন বাড়িয়ে । সদরঘাট টু মিরপুর ভাড়া হাঁকেন ৯০০ টাকা। আবার গাবতলী টু বংশাল ৮০০ টাকা । আর সদরঘাট টু বসুন্ধরা দুই হাজার টাকা।তাই অনেকেই পায়ে হেঁটে যে যার গন্তব্যে রওয়না দেন। দুপুর পর্যন্ত তাই ঢাকার সড়কগুলোর দুই পাশে ছিলো পথচারীদের লম্বা লাইন।

কেউ কেউ কিছুদুর পায়ে হেঁটে গিয়ে রিকশা নেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। রিকশা যেমন কম ভাড়াও আকাশ ছোঁয়া।

পটুয়াখালি থেকে সকালে সপরিবারে সদরঘাটে এসে নামেন ব্যবসায়ী ও সংস্কৃতি কর্মী সুমন জাহিদ। তার বাসা সদরঘাট থেকে বেশি দূরে নয়, তিন-চার কিলোমিটার দূরে টিকাটুলি। কিন্তু কিন্তু তাকে পরিবার নিয়ে একটি ভ্যানে বাসায় যেতে ৬০০ টাকা ভাড়া গুণতে হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে এই ভাড়া ১৫০ টাকার বেশি নয়। সুমন জাহিদ জানান," আমার দুইজন বন্ধুও এসেছেন। তাদের বাসা বসুন্ধরা এলাকায় ।

তারা সদরঘাটে বসেই ছিলেন। বিকেল তিনটার দিকে একটি রিকশা পান, ভাড়া দুই হাজার টাকা। আমার বোন তার সন্তানদের নিয়ে ভেঙে ভেঙে রিকশায় তার মোহাম্মদপুরের বাসায় রিকশায় গিয়েছেন। খরচ হয়েছে এক হাজার টাকা।”

এই রিকশা ভাড়ার আঁচ বিকেলেও ছিলো। বাংলামোটর এলাকা থেকে মিরপুর যেতে একজন রিকশা চালক দাবী করেন ৩৬০ টাকা। তার কথা এমনিতেই লোকজন কম। তার ওপর রাস্তাঘাট ভাঙা তাই একটু ভাড়া বেশি। আরেজন রিকশা চালক অভিযোগ করেন যাত্রী না থাকলে, মাস্ক না থাকলে পুলিশ রিকশা উল্টে দেয়।

লকডাউন, তার ওপর শুক্রবার তাই রাস্তাঘাটে সাধারণ চলাচলের লোকজন তেমন ছিল না। জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহনও দেখা যায়নি। রিকশা চলাচলে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পারবেন না। রাজধানীর প্রবেশপথ ও গরুত্বপূর্ণ সড়কে চেকপোস্ট ছাড়া পুলিশ গলির ভিতরেও অভিযান চালাচ্ছে। যাতে কেউ দোকানপাট খুলতে না পারে, আড্ডা জমাতে না পারে। রাস্তায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাব তৎপর আছে। আছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন বিভাগের মোট ৫৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে।

ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবদুল আউয়াল জানান," সরকারের যে নির্দেশনা আছে সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা লকডাউন কার্যকর করছি। কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা বাইরে বের হবেন তারাই আইনের আওতায় আসবেন। আর জরুরি প্রয়োজনের কথা যারা বলছেন তাদের তথ্য আমরা ভেরিফাই করছি।'

তিনি আরো জানান," জরুরি প্রয়োজনে যারা বের হবেন তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। রিকশা চালকেরা রিকশা চালাতে পারবেন, কিন্তু মাস্ক পরতে হবে।”

বাংলাদেশে ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত এই বছরে প্রথম দফা কঠোর লকডাউন দেয়া হয়। ঈদের জন্য এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে আবার শুক্রবার থেকে লকডাউন শুরু হল, যা চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত।

করোনা সংক্রমণ কমছে না। এখন সংক্রমণের হার ৩১.৫ ভাগ। ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ১৬৬ জন। এপর্যন্ত মারা গেছেন ১৮ হাজার৮৫১ জন। ২৪ ঘন্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ছয় হাজার ৩৬৪ জনের। মোট শনাক্ত ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৬৪ । শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মো. খুরশিদ আলম বলেছেন,"পরিস্থিতি সামাল দিতে পারব কিনা তা এখনো বুঝতে পারছি না। তবে সরকারের ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট ভালো।”

আগের বিধিনিষেধ খুব একটা কাজে আসেনি জানিয়ে অধ্যাপক খুরশিদ আলম আরো বলেন, "আগের দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধে তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। তবে সীমান্তবর্তী জেলায় সংক্রমণ কমেছে । আরো কিছু দিন পরে বিধিনিষেধের প্রভাব বোঝা যাবে।”