শেষের আগেই 'শেষ' লকডাউন!

শেষের আগেই 'শেষ' লকডাউন!

লকডাউন শেষ হতে না হতেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটে বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। দোকানপাট খুলছে। রাস্তায় বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। মোড়ে মোড়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। অনেকটা শিথিল হয়ে পড়েছে পুলিশের চেকপোস্টগুলো। তল্লাশি বা কাউকে বাসা থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে না। সাধারণ নাগরিকরা যেন লকডাউনের কথা বেমালুম ভুলেই গেছেন। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সকালে নগরীর খিলগাঁও এলাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে গণপরিবহন না পেয়ে তারা রিকশা-ভ্যানে চেপে, হেঁটে কিংবা অন্য উপায় অবলম্বন করে অফিসে যাচ্ছেন। পথে দু-চারটি চেকপোস্ট দেখা গেলেও তাতে কোনও পুলিশ দেখা যায়নি। তবে একটিতে পুলিশ দেখা গেলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন। এরমধ্য দিয়েই অসংখ্য মানুষ ও যানবাহন অবাধে চলাচল করছে।

এদিকে বিধিনিষেধ নিয়ে বিরাজ করছে ভজঘট অবস্থা। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব যখন থেকে শুরু হয় তখন থেকেই লকডাউন কিংবা বিধিনিষেধের শুরু। কিন্তু দীর্ঘ এ সময়ে দেশে একবারও লকডাউন কিংবা বিধিনিষেধ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। প্রতিবারই ব্যাপক ঢাকঢোল পিটিয়ে লকডাউন বা বিধিনিষেধের আদেশ জারি করা হলেও গোটা বিষয়টি শেষ হয় ঘরে ফেরার উৎসব অথবা দুর্ভোগের কারণ হয়ে। এ অবস্থায় আরেক দফা বিধিনিষেধ বাড়ানোর জন্য আজ (মঙ্গলবার) মন্ত্রণালয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। তবে তা কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে সন্দেহ-সংশয় দেখা দিয়েছে।

সকাল থেকে নগরীর খিলগাঁও, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, আরামবাগ, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, পল্টন, কাকরাইল, দৈনিক বাংলা মোড়, বাংলামোটর, মৎস্য ভবন, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ ও ধানমন্ডির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে।

এসব এলাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষ রাস্তায় বের হয়েছেন। যানবাহনের মধ্যে রিকশা-ভ্যান ব্যক্তিগত গাড়ি বাধাহীনভাবে চলতে দেখা গেছে প্রচুর। পথে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও বাধা দেয়া হচ্ছে না। ফলে করোনা মহামারি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে সকাল থেকে নগরীর অলিগলিগুলো ঘুরে দেখা গেছে প্রায় প্রতিটি দোকানপাট খুলেছে। সাধারণ মানুষ কেনাকাটা করছেন। জরুরি সেবার আওতায় পড়ে না এমন বেশিরভাগ দোকানপাটই খোলা। কোথাও কোনও বিধিনিষেধ কেউ মানছেন না, স্বাস্থ্যবিধি মানারও তোয়াক্কা নেই। সাধারণ মাস্কও পারছেন না ঘর থেকে বের হওয়া নাগরিকরা।

খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা হাজী নাসির উদ্দিন বলেন, সব ধরনের দোকানপাট খোলা রয়েছে। মানুষের যে পরিমাণ উপস্থিতি বেড়েছে‑ বিধিনিষেধ আছে বলে মনেই হচ্ছে না। তাই আমরা বাসা থেকে বের হলাম। কেনাকাটা করলাম। একটু পর অফিসে যাবো।

এদিকে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও রাজধানীর মিরপুর এলাকায় ছোট বাসগুলো চলাচল করতে দেখা গেছে। এসব বাসে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মিরপুরের বাসিন্দা রোমানা। তিনি বলেন, সকাল ৮টায় বাসা থেকে বের হয়ে মোটরসাইকেলে করে মৌচাক এসেছি। তখন মিরপুর এলাকায় ছোট পরিবহনগুলো চলাচল করতে দেখা গেছে। অধিকাংশ বাসে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। তবে রাস্তায় পুলিশ থাকলেও তারা কোনও বাধা দেয়নি। সাধারণ যাত্রীরাও বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করছেন না।

বাসচালকরা বলছেন, দীর্ঘদিন বসে থাকার কারণে তাদের অবস্থা এখন একেবারেই খারাপ হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে তারা রাস্তায় নেমেছেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, লকডাউনের মধ্যে গণপরিবহন রাস্তায় নামার কোন সুযোগ নেই। কেউ যদি আইন অমান্য করে তবে তার দায় তাকেই নিতে হবে। এরকম অভিযোগ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমজে/