বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান: ভারতের দাবিতে আপত্তি জানিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের চিঠি

বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান: ভারতের দাবিতে আপত্তি জানিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশের চিঠি

বঙ্গোপসাগরের কন্টিনেন্টাল শেলফ বা মহীসোপানে ভারতের দাবির বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে জাতিসংঘে একটি চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।

এর আগে গত এপ্রিলে বাংলাদেশের দাবির উপরে আপত্তি জানিয়ে নিজেদের দাবি তুলে ধরে জাতিসংঘে চিঠি দিয়েছিল ভারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার ভারতের সেই দাবির উপরে আপত্তি জানিয়েছে।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিবের বরাবর একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশ। চিঠিটি জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। খবর বিবিসি।

এতে বলা হয়, গত এপ্রিলে জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিশনে (সিএলসিএস) ভারত দাবি করেছিল, বাংলাদেশ যে মহীসোপান নিজেদের বলে দাবি করছে, তা ভারতের মহীসোপানের অংশ। সে সময়ই বাংলাদেশ জানিয়েছিল ভারতের ওই আপত্তির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই বলে তারা মনে করে। এ বিষয়ে কমিশনের সামনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার কথাও জানায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মহীসোপান নিয়ে বিতর্কের শুরুটা হয় ২০০৯ সালে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স বিভাগের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশিদ আলম জানান, ২০০৯ সালে ভারত তাদের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য যে ভিত্তিরেখা বা বেইজ পয়েন্ট নির্ধারণ করে, তার মধ্যে দুটি বেইজ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের আপত্তি ছিল। ২০০৯ সালে তাদের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের সময় একটি বেইজ পয়েন্ট ছিল বাংলাদেশের জলসীমার ভেতরে, আরেকটি বেইজ পয়েন্ট ছিল সাড়ে দশ নটিক্যাল মাইল সমুদ্রের ভেতরে।

নিয়ম অনুযায়ী, সমুদ্রের পানির নিুস্তর থেকে বেইজ লাইন নির্ধারণ করার কথা থাকলেও দুটি বেইজ পয়েন্ট সেই নিয়ম মেনে অনুমান করা হয়নি বলে মনে করে বাংলাদেশ। সে সময় ভারতের এই বেইজ লাইন নির্ধারণে ভুলের বিষয়টি উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং এটি সংশোধনের অনুরোধও করা হয়। এরপর ২০১১ সালে বাংলাদেশ নিজেদের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে তা দাবি করে আবেদন করে জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণবিষয়ক কমিশনে (সিএলসিএস)। পরে ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ বিষয়ে ভারতের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক আদালতের মামলায় বাংলাদেশ জয়লাভ করে এবং আদালত বাংলাদেশকে নিজেদের সংশোধিত সমুদ্রসীমা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

খুরশিদ আলম জানান, ২০২০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সংশোধিত সমুদ্রসীমা জমা দেয়। কিন্তু আদালত সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া সত্ত্বেও ভারত চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশের দাবি করা মহীসোপান নিয়ে আপত্তি জানায় সিএলসিএসে। ওই আপত্তিতে ভারত দাবি করে, বাংলাদেশ সমুদ্রপৃষ্ঠে যে বেইজ লাইন ধরে নিজেদের মহীসোপান নির্ধারণ করেছে, তা ভারতের মহীসোপানের অংশ। আদালত যখন সমাধান করে সীমানা নির্ধারণ করে দিল, তখন তো মহীসোপান নিয়ে ভারতের সঙ্গে আমাদের আর কোনো দ্বন্দ্ব থাকল না। কিন্তু ভারত তারপরও আপত্তি দেয়।

এবার চিঠি দিয়ে আমরা জাতিসংঘকে মূলত এটাই জানাই যে, ভারতের সঙ্গে আমাদের মহীসোপান নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই, কাজেই তারা যেন বিষয়টি বিবেচনা না করে। তবে আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভারত আনুষ্ঠানিক কোনো আবেদন করেনি, তাই মহীসোপান সংক্রান্ত তাদের দাবি আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে মনে করেন খুরশিদ আলম।

তিনি আরও বলেন, সমুদ্রসীমা নিয়ে যেই দ্বন্দ্ব ছিল তা মিটে গেছে আদালতের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ২০১৪ সালে। এরপর তারা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতে কোনো আবেদন করেনি।

এমজে/