রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়: মাহবুব তালুকদার

রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়: মাহবুব তালুকদার

সাম্প্রতিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ীদের নির্বাচিত বলা যায় কিনা- সে বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের কারণ বিশ্লেষণ করা জরুরি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার সুপারিশ রেখেছেন তিনি। সোমবার অনুষ্ঠিত পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচন সম্পর্কে গতকাল গণমাধ্যমকে দেয়া আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ হতাশার কথা জানান।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬ দিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন মাহবুব তালুকদার। এই সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত ১৬০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও ৯টি পৌরসভা নির্বাচনে তার সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে তিনি কোনো কথা বলেননি। বুধবার তার দপ্তর থেকে একটি লিখিত প্রতিক্রিয়া গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। এতে মাহবুব তালুকদার বলেন, এমন সংক্ষিপ্ত সময়ে আকস্মিকভাবে নির্বাচনি ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়।

উল্লিখিত নির্বাচনে তিনজনের প্রাণহানী ঘটেছে। এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আমি সর্বদা বলে এসেছি জীবনের চেয়ে নির্বাচন বড় নয়। তবু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ে সহিংসতা রোধ করা গেল না। নির্বাচনে ঘটনা বা দুর্ঘটনা যা-ই হোক না কেন, নির্বাচন কমিশনের ওপরই দায় এসে পড়ে। তবে নির্বাচনের সকল দুর্ঘটনা, অর্থাৎ বিশৃঙ্খলা, অবৈধভাবে ব্যালটে সিল মারা, প্রতিপক্ষকে হুমকি প্রদান ইত্যাদি অনাকাঙ্খিত বিষয়ের পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তিনি দায়িত্বপালনকালে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনানুগভাবে দায়িত্বপালনের জন্য বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছিল। যে সব স্থানে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, এর জন্য যারা দায়ী, প্রমান সাপেক্ষে তাদের আটক করা হয়েছে। যারা অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিয়েছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদেরও আটক করা হয়েছে। অধিকতর তদন্ত করে আরও অনেককে আইনের আওতায় আনা হবে। সহিংসতা রোধ কাউকে ছাড় দেয়া হয়নি এবং হবে না। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে একজন সংসদ সদস্যকে সতর্কবার্তা পর্যন্ত প্রেরিত হয়েছে।

সোমবারের নির্বাচনের টার্নআউট নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের টার্নআউট মোটামুটি ভালো ছিল, শতকরা ৬৯.৩৪ ভাগ। কিন্তু বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও ইউনিয়ন পরিষদে ৪৩ জন প্রার্থী নির্বাচন না করেই চেয়ারম্যান পদে অভিষিক্ত হওয়া এই নির্বাচনকে ম্লান করে দিয়েছে। অন্যদিকে ৯টা পৌরসভায় তিনজন প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন যেহেতু অনেকের মধ্যে বাছাই, সেহেতু বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় পদে আসীন হওয়াকে নির্বাচিত হওয়া বলা যায় কি? বহুদলীয় গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনে বহুদলের অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনের কারণ বিশ্লেষণ করে সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ অনিবার্য। ভোটারদের নির্বাচন বিমুখতাও আমার কাছে গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত মনে হয়। এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচন ব্যবস্থাপনা জড়িত। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সার্বিকভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্ভর করে না। রাজনৈতিক সমঝোতা ব্যতীত এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। ১৫ সেপ্টেম্বর ‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে’ মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সকলের নীরবতা আমাকে হতাশ করেছে। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমরা কি গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় সামিল হতে অনিহা প্রকাশ করছি?