বাংলাদেশ ও ভারতে গুলাবের যে প্রভাব পড়বে

বাংলাদেশ ও ভারতে গুলাবের যে প্রভাব পড়বে

বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’ রোববার মধ্যরাত নাগাদ ভারতীয় উপকূল অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর।

হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ ছাড়া ঘূর্ণিঝড়টির তেমন কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না। তবে উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় ভারতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার এরই মধ্যে নানা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বলে খবরে জানা যাচ্ছে।

ঢাকার আবহাওয়া অধিদফতর থেকে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়টি বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার, মোংলা থেকে ৫২৫, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩০ এবং চট্টগ্রাম থেকে ৬৮৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।

উড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশে লাল হুঁশিয়ারি সঙ্কেত

ভারতের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে যে, ঘূর্ণিঝড় গুলাব রোববার রাতে উড়িষ্যার দক্ষিণে এবং অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তরে কলিঙ্গপাটনামে আঘাত হানবে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে, রোববার রাত নাগাদ ঘূর্ণিঝড় গুলাব আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। এসময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ৯৫ কিলোমিটার।

ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর উড়িষ্যা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু অংশে অতি ভারী বর্ষণের আশঙ্কার রেড ওয়ার্নিং বা লাল হুঁশিয়ারি সঙ্কেত জারি করেছে। এছাড়া দক্ষিণ ছত্তিশগড়ে সোমবার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবে সেসময় ঘূর্ণিঝড়টির শক্তি কমে সেটি নিম্নচাপে পরিণত হবে।

তবে দেশটির আবহাওয়া অধিদফতর ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী দুর্যোগেরও সতর্কতা দিয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের পর বন্যা এবং কুঁড়েঘর বা দুর্বল স্থাপনা ধসে পড়তে পারে বলে জানানো হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভারী বৃষ্টির আশঙ্কায় ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমলা সঙ্কেত জারি করা হয়েছে ভারতের বিদর্ভ, তেলেঙ্গানা, মারাঠওয়াডা, কংকন উপকূল, মুম্বাই এবং গুজরাটে।

ভারতের এক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ঘূর্ণিঝড় গুলাব মোকাবিলায় উড়িষ্যা এবং অন্ধ্রপ্রদেশে নানা প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

উদ্ধারকর্মীদের দল এই দুই রাজ্যের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাবে।

ওই কর্মকর্তা জানান, জাতীয় দুর্যোগ তৎপরতা বাহিনীর আলাদা পাঁচটি দলকে উড়িষ্যা এবং অন্ধ্রপ্রদেশে মোতায়েন করা হয়েছে।

উড়িষ্যা ও অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে মাছ ধরতে না যেতে স্থানীয় জেলেদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এর আগে বঙ্গোপসাগরে সর্বশেষ যে ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হয়েছিল, সেটির নাম ইয়াস।

গত মে মাসে এটি ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত হেনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল।

বাংলাদেশের উপকূলে কী প্রভাব পড়বে?

ঢাকায় আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ভোর ৬টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের উড়িষ্যা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল অতিক্রম করবে। রোববার মধ্যরাত নাগাদ উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানান তিনি।

‘তবে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল থেকে দূরে অবস্থান করার কারণে বাংলাদেশে তেমন প্রভাব পড়বে না। এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূল এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত ও হালকা দমকা বাতাস বয়ে যেতে পারে,’ বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতর।

তিনি বলেন, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বরিশাল বিভাগে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা বেশি থাকলেও চট্টগ্রাম বিভাগে তেমন কোনো প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই।

কক্সবাজার থেকে সংবাদদাতারা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় গুলাবের কোনো আগাম প্রভাব এখন পর্যন্ত তেমন দেখা যায়নি। সমুদ্র কিছুটা উত্তাল হয়ে আছে।

শনিবার বিভিন্ন জায়গায় বজ্রবৃষ্টি হলেও রোববার দিনটি এখন পর্যন্ত রৌদ্রকরোজ্জ্বল। মংলাতেও আবহাওয়া একেবারেই স্বাভাবিক।

মাছ ধরা ট্রলারগুলোকেও এখন পর্যন্ত তীরে ফিরে আসার কোনো ঘোষণা সরকারিভাবে দেয়া হয়নি।

সংবাদদাতারা বলছেন, কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির দিকে সতর্ক নজর রাখছেন। সূত্র : বিবিসি

এমজে/