‘যারা নৌকায় ভোট দেবে, তারাই কেবল ভোটকেন্দ্রে যাবে’

‘যারা নৌকায় ভোট দেবে, তারাই কেবল ভোটকেন্দ্রে যাবে’

আগামী ১১ নভেম্বরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা নৌকা প্রতীকে ভোট দেবে না, তারা যেন ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না পারে সে লক্ষ্যে যুবলীগ নেতাকর্মীদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ঈশ্বরীপুরে যুবলীগ আয়োজিত এক নির্বাচনী জনসভায় তিনি এ ঘোষণা দেন।

এই নির্দেশ দিয়েই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ক্ষান্ত হননি, নৌকার পক্ষে যারা থাকবে না, তাদের হাত-পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।

জনসভায় তার দেওয়া এই বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। নিজের বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘যুবলীগের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতেই এমন বক্তব্য দিয়েছি।’

গতকালের জনসভায় যুবলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। যারা নৌকায় ভোট দেবে, তারাই কেবল ভোটকেন্দ্রে যাবে। অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’

ভিডিওতে দেখা যায়, যুবলীগনেতা জাহাঙ্গীর আলম বলছেন, ‘আমি বলতে চাই, আমার যুবলীগের প্রতিটি কর্মীকে যে, আপনারা আজকে থেকেই প্রস্তুত থাকুন। নৌকার সঙ্গে যারা বেঈমানি করবে, তাদের হাত-পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবেন।’

জনসভায় জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ‘আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে একটি কথাই বলতে চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ইউনিয়নগুলোর বরাদ্দ উপজেলার মাধ্যমেই দেন। আলহাজ ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি সাহেব তার অনুদানগুলো এই উপজেলার মাধ্যমেই দেন। তা আমি হইলাম নৌকার মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। আপনাদের ভোটের মাধ্যমেই নৌকার ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। তাহলে আমার যে অনুদান, আমরা যদি নৌকার প্রার্থী না জিতাতে পারি, তাহলে কী আরেকজন যে নৌকার বিপক্ষে থাকবে, সেই অনুদান কি তাকে দেব আমি? অবশ্যই না। তাহলে এইদিকে চিন্তা করতে হবে।’

উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র পাহারা দিয়ে যারা নৌকায় ভোট দেবে, তারাই কেবল কেন্দ্রে ঢুকবে। তা ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই কাজ করে ফেলতে হবে।’

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গোদাগাড়ী পৌরসভা নির্বাচনের উদাহরণ টেনে উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পৌরসভার নির্বাচন হয়েছে। আমাদের নবনির্বাচিত মেয়র বসে আছেন। গোদাগাড়ীর পৌরসভা রাজাকারের মতো এলাকা। আমার বাড়িও ওখানে। কিছু মনে কইরেন না। সেখানে যদি নৌকার প্রার্থী জিততে পারে সব সেন্টার দখল করে নিয়ে, আপনারা পারবেন না? দেওপাড়া তো আমাদের নৌকার ঘাঁটি, আপনারা পারবেন না যুবলীগের নেতাকর্মী? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পারবেন না। মহিলা লীগের নেতাকর্মী পারবেন না। আমাদের অবশ্যই অবশ্যই ১১ তারিখে দেখায়ে দিতে হবে, আমরা অবশ্যই ন্যায়ের পথে আছি। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আছি। আমরা আলহাজ ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে আছি। আমরা সর্বোপরি বেলাল উদ্দিন সোহেলের (দেওপাড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী) পক্ষে আছি।’

ইউপি সদস্য পদে যেসব যুবলীগনেতা নির্বাচন করছেন তাদের উদ্দেশে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনারা ভোট করেন, কোনো আপত্তি নাই। করতে পারেন। কিন্তু এখানে কথা আছে। প্রথমে আপনি নৌকার ভোট চাইবেন। নৌকার ভোট চাওয়ার পর বলবেন নৌকা হলে উন্নয়ন হবে, না হলে আমার মেম্বার হওয়ার কোনো দাম নাই। আগে নৌকার ভোট চাইবেন, তারপর বলবেন যে আমাকে মেম্বারে ভোট দেন। তাহলে আপনার দাম আছে। অনেকজন ভাবে যে, আমি সবদলেরই ভোট পেয়ে মেম্বার হবো। এটা কোনোদিন হয়? কোনোদিন হয়েছে? কিন্তু এই ধারণা মানুষের থাকে। ডিজিটাল যুগে চেঞ্জ হতে হবে আপনাকে, আমাকে সবাইকে। আপনি নৌকার সঙ্গে থাকলে নৌকার মাধ্যমে নেতা হবেন। আর ভোটের সময় অন্য গীত গাইবেন, এটা আর সহ্য করা হবে না।’

এ বিষয়ে মুঠোফোনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সেখানে যুবলীগের সভা ছিল। আমি যুবলীগের সভাপতি হিসেবে সেখানে গেছি। যুবলীগের নেতাকর্মীদের আমি মঞ্চে উঠে কি একটু উজ্জীবিত করতে পারব না? জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গোদাগাড়ীতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমি ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার কথা বলেছি যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে।’

উল্লেখ্য, আগামী ১১ নভেম্বর গোদাগাড়ী উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত। পরের দিন ২৭ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্দ। উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আকতারুজ্জামান এবার নৌকার মনোনয়ন পাননি। এখানে চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন বেলাল উদ্দিন সোহেল। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামানের ভাতিজা মাসুদ ইকবাল।