ছাত্রলীগ নেতার হুমকি

‘নৌকার বিরুদ্ধে যদি একটা ভোটও কাটে, পাঁচটা লাশ পড়বে’

‘নৌকার বিরুদ্ধে যদি একটা ভোটও কাটে, পাঁচটা লাশ পড়বে’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার পশ্চিম নবীনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করে ভোট নিলে লাশ ফেলার হুমকি দিয়েছেন এক ছাত্রলীগ নেতা।

বৃহস্পতিবার রাতে ইউনিয়নের লাপাং উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকাশ্যে এই বক্তব্য দেন আশরাফুল আলম নামের ওই ছাত্রলীগ নেতা।

আশরাফুল আলম নবীনগর উপজেলার পশ্চিম নবীনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। তিনি ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ফিরোজ মিয়ার ভাতিজা। তাঁর ওই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বক্তব্যের ভিডিওটি আমাদের কাছে এসেছে। আমরা ছাত্রলীগের ওই নেতাকে খোঁজার চেষ্টা করছি। তবে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, এখানে ভয়ের কোনো কারণ নেই। কারণ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। পুলিশ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে এবং নির্বাচনের দিন কাজ করবে। ভোটারদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।

স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ২৮ নভেম্বর পশ্চিম নবীনগর ইউপিতে নির্বাচন হবে। এখানে চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ফিরোজ মিয়া। বৃহস্পতিবার রাতে নৌকা প্রতীকের সমর্থনে ইউনিয়নের লাপাং উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে এক সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল।

সভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ফিরোজ মিয়ার ভাতিজা ও ইউপি ছাত্রলীগের সভাপতি আশরাফুল আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘প্রশাসন কাজ করুক বা না করুক নৌকার বিরুদ্ধে যদি একটা ভোটও কাটে, ওই ওয়ার্ডে পাঁচটা লাশ পড়বে ইনশা আল্লাহ। লিডার, ছাত্রলীগ তো, আবেগে চইলা আসছে। ইনশা আল্লাহ নৌকার বিপক্ষে কেউ ভোট কাটতে পারবে না। আমরা শক্ত হাতে প্রতিবাদ করব।’

শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত একাধিকবার চেষ্টা করে মুঠোফোন বন্ধ থাকায় আশরাফুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমাদের সভা চলাকালে পাশের চিত্রী গ্রামে নৌকার বিপক্ষে ভোট কাটা হবে বলে খবর পেয়েছিলাম। তাই মুখে এমন কথা এসে গেছে। আসলে বয়স অল্প, বিবেকের তাড়নায় তখন আবেগে এসব বলে ফেলেছি।’

নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ফিরোজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ৩ নম্বর ওয়ার্ড চর লাপাং। মেঘনার পাড় থেকে লোকজন এনে ভোট কাটেন (জোর করে ভোট নেন)। আগের নির্বাচনগুলোতেও এমন হয়েছে। বর্তমানে গ্রামের লোকজন বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। সে হিসেবে ছাত্রলীগ সভাপতি বক্তব্যে নৌকার ভোট কাটলে লাশ পড়বে বলেছেন। এমন বক্তব্য দেওয়া সঠিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সঠিক-বেঠিক না, ছেলেমানুষ হিসেবে এই বক্তব্য দিয়েছে। নৌকার কাটলে এমন করবে বলেছে।

আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী নূর আলম ওরফে নুরুজ্জামান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন সর্বত্রই আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। তাঁরা এলাকায় অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করছেন। তাঁদের ভয়ে আমরা সবাই আতঙ্কে আছি। আমরা চাই, ভোটাররা নির্বিঘ্নে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। সেটি সম্ভব তখনই হবে, যদি এখানে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়।’