রাষ্ট্রপতিকে শাবি শিক্ষার্থীদের খোলা চিঠি

রাষ্ট্রপতিকে শাবি শিক্ষার্থীদের খোলা চিঠি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে খোলা চিঠি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার দুপুরে ক্যাম্পাসে আচার্যের কাছে পাঠানো ওই চিঠিটি পাঠ করে শোনান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন।

শিক্ষার্থীরা চিঠিতে উল্লেখ করেন, আমরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহিদ ও দুই লাখ বীরাঙ্গনার ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের বিধি মোতাবেক আপনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।

আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য আপনি সাংবিধানিক বিধি মোতাবেক আপনার প্রতিনিধিস্বরূপ উপাচার্য নিয়োগ করে থাকেন।
আমরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশের কল্যাণে নিজেদের প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে অধ্যয়নে নিবেদিত আছি।

গত ১৬ জানুয়ারি শাবিপ্রবির ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের সামনে নিরাপদ আবাসন পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তিন দফা দাবি করা হয়। এ সময় আন্দোলনরত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের আবাসিক ছাত্রী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বিনা উসকানিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশের নিষ্ঠুর হামলা করে।

এ সময় বাংলাদেশের জনগণের টাকায় রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত পুলিশের নির্বিচার লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের শিকার হয় নিরস্ত্র শিক্ষার্থীরা। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ শিক্ষার্থী, যাদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ২০ এর বেশি। এরমধ্যে কারো মাথা ফেটেছে, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রচণ্ড জখম হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন অনেকে।

ছাত্রীদের ওপর অসম্ভব নিষ্ঠুরভাবে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা মুহুর্মুহু লাঠি চার্জ করেছে। ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের ওপর এমন নৃশংস হামলার ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। দাবি না মেনে উল্টো পুলিশি হামলায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলার ঘটনায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যেভাবে মূল কুশীলবের ভূমিকা পালন করেছেন। এটা সরাসরি সংবিধানবিরোধী এবং ফরিদ উদ্দিন আহমদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের সরাসরি অপব্যবহার ও বরখেলাপ।

এ ঘটনায় শাবিপ্রবির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীবৃন্দ হতবাক এবং সংক্ষুব্ধ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে, আমাদের মহামান্য আচার্য তাঁর জীবন অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বুঝতে পারেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ, দশ ও নিজেদের ভালমন্দ অনুধাবন করার সক্ষমতা রাখি। আজ এটা দিনের মতো পরিষ্কার যে, আপনার প্রতিনিধি হিসেবে ফরিদ উদ্দিন আহমদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের সব নৈতিক, যৌক্তিক ও সাংবিধানিক যোগ্যতা হারিয়েছেন।

এ ঘটনা আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছে যে, এই ‘অথর্ব, অযোগ্য ও স্বৈরাচারী’ ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী ক্ষমতায় বহাল রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলমন্ত্রের পরিপন্থী। বর্তমানে শাবিপ্রবির কোনো শিক্ষার্থীই এই উপাচার্য দায়িত্বে থাকাকালে ক্যাম্পাসে নিরাপদ বোধ করছে না।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রোববার হামলার পর সোমবারও সারাদিন ক্যাম্পাসে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলফটকে জলকামান ও রায়ট-কারসহ পুলিশের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা আমাদের মহামান্য আচার্যের কাছে আবেদন করছি, অবিলম্বে ক্যাম্পাসে ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য পুলিশ-র্যা বসহ যে কোনো নিরাপত্তা বাহিনীকে মোতায়েন না করার নির্দেশ দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বিধান করুন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা উপচার্যের পদ থেকে ১৬ জানুয়ারির হামলার মূল মদদদাতা ফরিদ উদ্দিন আহমদের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করে তাকে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে মহামান্য আচার্যের কাছে আমাদের আবেদন, আপনার সরাসরি হস্তক্ষেপে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের অপসারণ নিশ্চিত করে, একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে উদ্যোগ নিন।

এমজে/