কক্সবাজারের চকরিয়া

বিদ্যালয়ের মাঠেও তামাকের আগ্রাসন!

বিদ্যালয়ের মাঠেও তামাকের আগ্রাসন!

কক্সবাজার, ১৮ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১০ ইউনিয়নে আবাদি জমিতে বেড়েছে তামাক চাষ। কমেছে ধান-সবজির উৎপাদন। তামাকের আগ্রাসন থেকে বাদ যায়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ পর্যন্ত। তেমনি উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের পূর্ব কৈয়ারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তামাক চাষ করা হয়েছে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি স্কুলের নিকটে নির্মিত তন্দুরে কিউরিং করা তামাকের গন্ধে ছাত্র-ছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের পূর্ব কৈয়ারবিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের মাঠটি নিরঞ্জন দাশ নামের এক ব্যক্তির। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ছেলে এ জমি দেখাশোনা করছেন। তিনি স্কুল মাঠের ওই জমিটি স্থানীয় এক চাষীকে বর্গা দেন চাষ করার জন্য। ওই বর্গা চাষী ওই জমিতে কয়েক বছর ধরে তামাকের চাষ করে আসছে।

পূর্ব কৈয়ারবিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেখা রানী দাশ জানান, স্কুলের সামনে মাঠটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। যার কারণে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন কিংবা শিক্ষা বিভাগের কাউকে বলা হয়নি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো.গিয়াস উদ্দিন বলেন, স্কুলের জমিটি মূলত দান করেছিল ওই এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি। স্কুল ভবনটি ছাড়া সামনে জায়গাটি ওদের। যার কারণে আমরা কিছু করতে পারিনা।

তিনি আরো বলেন, আমরা চাই সামনের জায়গাটি ক্রয় করে স্কুলের কাজে ব্যবহার করতে। কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে ক্রয় করা যাচ্ছেনা।

বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র মো.জসীম উদ্দিন জানান, মাঠে তামাক চাষ করায় আমরা খেলাধুলা করতে পারি না। দুপুরে বিরতির সময় বারান্দাতে বসে অলস সময় কাটাতে হয়।

টিআইবির সহযোগী প্রতিষ্ঠান সনাক চকরিয়ার ব্যবস্থাপক এজেএম জাহাংগীর আলম কয়েকদিন আগে স্কুল মাঠে তামাক চাষের দৃশ্যটি ধারণ করেন। পরে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছবিটি পোস্ট দিলে সমালোচনা শুরু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, ফাঁসিয়াখালী, চিরিংগা, ডুলাহাজারা, সাহারবিল ও পৌরসভার একাংশে ব্যাপক হারে তামাক চাষ করা হয়।

চকরিয়ায় তামাক চাষের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলনে কাজ করছেন উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণ গবেষনা (উবিনীগ) নামের একটি এনজিও সংস্থা। সংস্থাটির কক্সবাজারের আঞ্চলিক সমন্বয়ক মো. জয়নাল আবেদিন জানান, চকরিয়া উপজেলায় প্রতিবছর ফসলি জমির পাশাপাশি সরকারি খাসজমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের চাষ। প্রতিবছর বেড়ে যাচ্ছে তামাক চাষের বিস্তার। কিন্তু চলতিবছর স্কুলের মাঠ পর্যন্ত তামাক চাষের দখলে চলে গেছে যা সত্যিই দু:খজনক। স্থানীয় ট্যোবাকো কোম্পানীগুলোর লোভনীয় ফাঁদে পড়ে চাষীরা পরিবেশ বিধ্বংসী এ চাষে সম্পৃক্ত হচ্ছেন।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্টদের নির্লিপ্ততার সুযোগে প্রতিবছর উপজেলাজুড়ে বেড়ে চলছে তামাক চাষের ভয়াবহতা। প্রতিবছর তামাক চাষের ভয়াবহ বিস্তারের কারণে উপজেলার প্রতিটি জনপদে (বিশেষ করে তামাক চাষ এলাকায়) কমে যাচ্ছে আবাদি জমিতে ধান-সবজির চাষ।

পরিবেশ ধ্বংসকারী এই তামাক চাষের কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ এলাকার নারী-পুরুষরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে জেনে তামাক চাষ রোধকল্পে গত বছর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলামের নেতৃত্বে কাকারা সড়কে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন করা হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অংশ গ্রহণে। এরপরও থেমে নেই তামাকের আগ্রাসন।

চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা.মোহাম্মদ শাহবাজ বলেন, প্রতিবছর তামাক মৌসুমে হাসপাতালসহ প্রাইভেট ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের কাছে বেড়ে যায় রোগী। শিশু-নারী ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা অত্যাধিক বাড়ে। বেশিরভাগ রোগীই নানা ধরনের ভাইরাস, হাঁপানি, এ্যাজমা, গ্যাস্ট্রিক, আলসারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে আসে। এসব রোগ পোড়ানো তামাকের গন্ধসহ নিকোটিন থেকে সৃষ্ট।

উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ারুল কাদের বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির কেউ আমাকে স্কুল মাঠে তামাক চাষ করার বিষয়টি জানায়নি। খোঁজখবর নিয়ে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৪৩১ঘ.)