বিশ্বে পদ্মা সেতুর সমান দৈর্ঘ্যের অন্যান্য সেতুর খরচ ও নির্মাণকাল

বিশ্বে পদ্মা সেতুর সমান দৈর্ঘ্যের অন্যান্য সেতুর খরচ ও নির্মাণকাল

পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের কতই না আগ্রহ। সমান আগ্রহ ছিল সেই যমুনা সেতু নিয়েও। একেকটি সেতু কেবল একেকটি জনপদকেই যুক্ত করে না, সহজ করে জীবনকে, বাঁচিয়ে দেয় মহামূল্যবান সময়। পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংযুক্তির ব্যাপার তো থাকছেই।

সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পদ্মা সেতু। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। দ্বিতল এই সেতুর এক অংশ পদ্মা নদীর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত এবং অপর অংশ নদীর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যুক্ত। একই সঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এ সেতুতে। চার লেন বিশিষ্ট ৭২ ফুট প্রস্থের এ সেতুর নিচতলায় রয়েছে রেল লাইন।

এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতুর পাইলিং ও নদীশাসনের কাজ উদ্বোধন করেন। এরপর একে একে সব ধাপ পেরিয়ে পদ্মার বুকে ৪২টি পিলারের ওপর দৃশ্যমান হয়ে ওঠে স্বপ্নের সেতু। ২০১৪ সালের নভেম্বরে কাজ শুরুর পর ২০২২ সালের জুনে শেষ হয় নির্মাণকাজ।

উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়ার মাধ্যমেই দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে সুইডেনের অল্যান্ড ব্রিজকে পেছনে ফেলে ১৩৪তম অবস্থানে উঠে এসেছে পদ্মা সেতু। চলুন দেখে নেয়া যাক পদ্মার সেতুর মতো একই দৈর্ঘ্যের কয়েকটি সেতুর বিভিন্ন তথ্য।

পদ্মা সেতুর ঠিক আগেই ১৩৩ নম্বর অবস্থানে রয়েছে ভারতের দিবাং নদীর সেতু। ভারতীয় রাজ্য অরুণাচলে অবস্থিত ৬ হাজার ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি পানির ওপর নির্মিত ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সেতু। ২০১০ সাল থেকে সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়। আর শেষ হয় ২০১৮ সালে। মোট ৭৫০ কোটি রূপি খরচ হয় সেতুটি নির্মাণে।

তালিকার ১৩২ নম্বরে আছে মিয়ানমারের দেদায়ে সেতু। স্থানীয় আয়েয়াওয়াদি বা টো নদীর বুক চিরে বয়ে গেছে ৬ হাজার ২৬২ মিটার দীর্ঘ এই সেতুটি। ২০০০ সালের ১০ জুন সেতুটির কাজ শুরু হয়। তিন বছরের মাথায় ২০০৩ সালের মার্চে চালু হয় সেতুটি। মোট খরচ হয় ১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৫ কোটি বাংলাদেশি টাকা।

১৩১ নম্বরে থাকা সেতুটিও মিয়ানমারে অবস্থিত। নাম পাকোক্কু সেতু। মিয়ানমারের সবচেয়ে দীর্ঘ এই সেতুটি ৬ হাজার ২৭৮ মিটার লম্বা। পাকোক্কু শহরের ইরাবদি নদীর ওপর অবস্থিত সেতুটি একটি রেল ও সড়ক সেতু। ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ের অংশ এই সেতু। ব্রিজটির নির্মাণব্যায় সম্পর্কে উইকিপিডিয়ায় কোনো তথ্য মেলেনি।

এরপর ১৩০ নম্বরে রয়েছে চীনের উফেংশান ইয়াংজি রিভার ব্রিজ। ইয়াংজি নদীর বুক চিরে বয়ে যাওয়া দ্বিতল এই সেতুটি ৬ হাজার ৪০৯ মিটার দীর্ঘ। এই সেতুটি বিশ্বের দীর্ঘতম স্প্যান হাই-স্পিড রেলওয়ে সেতু। এর প্রধান স্প্যানটিই ১ হাজার ৯০২ মিটার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর নির্মাণব্যায় ৯ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ২৮ অক্টোবর সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং শেষ হয় ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় সেতুটি।

১২৯ নম্বরে থাকা সেতুর নাম হলো সালে-এলস্টার ভায়াডাক্ট, যা জার্মানির সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু। এমনকি ইউরোপের দীর্ঘতম রেল সেতু এটি। ১৯১টি স্প্যান বসানো এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৪৬৫ মিটার। সালে এবং হোয়াইট এলস্টার নদীর মোহনা ভেদ করে বয়ে যাওয়া এ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৬ সালে, শেষ হয় ২০১৩ সালে এবং উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ২০১৫ সালে। তবে এই সেতুর নির্মাণব্যায় সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।

৬ হাজার ৫৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যের অ্যাস্টোরিয়া-মেগলার ব্রিজটি দীর্ঘতম সেতুর তালিকায় ১২৮ নম্বরে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৬২ সালের নভেম্বরে। শেষ হয় ১৯৬৬ সালের আগস্টে। সে সময় ২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয় সেতুটি নির্মাণে। বর্তমান সময়ের বিবেচনায় বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা।

৬ হাজার ৫৮৮ মিটার দৈর্ঘ্য নিয়ে তালিকার ১২৭ নম্বরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেরই আরেকটি ব্রিজ। নাম সেইন্ট জর্জ আইল্যান্ড ব্রিজ। ২০০২ সালে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০০৬ সালে। এরপর ১২৬ নম্বরে আছে মিয়ানমারের সড়ক ও রেলসেতু থানলউইন ব্রিজ। ৬ হাজার ৫৮৯ মিটার দীর্ঘ এটি। ২০০০ সালের মার্চে নির্মাণকাজ শুরু হয় ব্রিজটির; শেষ হয় ২০০৫ সালের এপ্রিলে। এ সেতু দুটিরও নির্মাণব্যায় জানা যায়নি।

তালিকার ১২৫ নম্বরে থাকা ব্রিজটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের সানশাইন স্কাইওয়ে ব্রিজ। ৬ হাজার ৫৯৮ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮২ সালের জুনে; এবং সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ১৯৮৭ সালের এপ্রিলে। সে সময় ২৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে তৈরি করা হয় ব্রিজটি। বর্তমান হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বা ৫৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এরপর ডেনমার্কের গ্রেট বেল্ট ব্রিজ (ওয়েস্টার্ন) ৬ হাজার ৬১১ মিটার দৈর্ঘ্য নিয়ে ১২৪, চীনের সিয়াংশান হারবর ব্রিজ (৬ হাজার ৭৬১ মিটার) ও নানজিং ইয়াংজি রিভার ব্রিজ (৬ হাজার ৭৭২ মিটার) যথাক্রমে ১২৩ ও ১২২ নম্বরে রয়েছে। ১২১ নম্বরে রয়েছে ডেনমার্কের গ্রেট বেল্ট ব্রিজ (ইস্টার্ন), যার দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৭৯০ মিটার। আর ১২০ নম্বরে রয়েছে দালিয়ান সিংহাই বে ব্রিজ। চীনের এই ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৮০০ মিটার।

উল্লেখ্য, দৈর্ঘ্যের দিক বিবেচনায় সেতুর তালিকায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীন। বিশ্বের দীর্ঘতম ১০ সেতুর ৭টির অবস্থানই সেখানে। আর এই ১০টির মধ্যে ৯টিই রয়েছে এশিয়া মহাদেশে।