ব্লুমবার্গের রিপোর্ট

বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়ছে

বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়ছে

জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। ডলারের রিজার্ভে চাপ পড়েছে। এ জন্য অর্থ ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত রাখতে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফ সহ ঋণদাতাদের কাছে সহায়তা চাইছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে ঢাকাভিত্তিক পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, আইএমএফ’র ঋণ প্যাকেজ অনুমোদন দিলে বাজার স্থিতিশীল হবে এবং আমরা কিছু তহবিল পাবো, যা দিয়ে রিজার্ভকে উন্নত করা যাবে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির ৪১৬০০ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে রয়েছে শক্তিশালী গার্মেন্ট খাত। তারা এইচএন্ডএম হেন্স অ্যান্ড মরিটজ এবি এবং গ্যাপ ইনকরপোরেশনকে পোশাক সরবরাহ দিয়ে থাকে। এই দেশটি আইএমএফ’র কাছে সহায়তা চেয়েছে। এই সহায়তাকে ঢাকার কর্মকর্তারা পূর্ব প্রস্তুতি বলে বর্ণনা করেছেন। একই সঙ্গে প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের মতো একে বেইলআউট তহবিলের সমতুল্য নয় বলে তারা দাবি করেছেন। বুধবার অর্থমন্ত্রী এএইচএম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বাংলাদেশ কোনো অর্থনৈতিক সংকটে নেই।

ভবিষ্যতের যেকোনো প্রয়োজনের জন্য আমরা এই তহবিল সংগ্রহ গড়ে তুলছি। যখন দরকার হবে তখন আমরা টাকা কোথায় পাবো? তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমদানি খরচ অনেক বেড়েছে।

তাই প্রয়োজন হলে সেই আমদানি খরচ মেটাতে বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)-এর কাছে যেতে পারে বাংলাদেশ। মুডি’স ইনভেস্টর সার্ভিসের মতে, বাংলাদেশের ওপর চাপ পড়ছে। তবে এখনো সংকটের ঝুঁকি কম। যদিও গত ১২ মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শতকরা ১৩ ভাগ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯৬৭ কোটি ডলার, তবু চার মাসের আমদানি খরচ মেটানোর জন্য তা যথেষ্ট। আইএমএফ’র প্রেসক্রিপশনে তিন মাসের সময়ের কথা বলা হলেও এই সময় তার চেয়ে বেশি। তুলনামূলকভাবে ১৫ই জুলাই পাকিস্তানের রিজার্ভ ছিল ৯৩৩ কোটি ডলার। এই অর্থ দিয়ে মাত্র দুই মাসের আমদানি খরচ মেটানো যেতে পারে। অন্যদিকে জুনের শেষে শ্রীলঙ্কার রিজার্ভ দাঁড়ায় ১৮৬ কোটি ডলার। এর মধ্যে রয়েছে চীনের শর্তসাপেক্ষ ১৫০ কোটি ডলার। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুটি দেশে রাজনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতি আইএমএফ’র বেইলআউট প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। তাতে তাদের বাজারে লোপাট চলছে।

বাংলাদেশেও এ বছর এখন পর্যন্ত শেয়ারের মূল্য শতকরা ১০ ভাগেরও বেশি কমে গেছে। এর কারণ, বিনিয়োগকারীরা তাদের পুঁজি অধিকমাত্রায় কম ঝুঁকির সম্পদের ক্ষেত্রে স্থানান্তর করছেন। এ ছাড়া আরও দেশ শ্রীলঙ্কার পথে ধাবিত হওয়ায় উদ্বেগ তো বৃদ্ধি পাচ্ছেই। এ সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে জালিয়াতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ, এর আগে কিছু মানি চেঞ্জার প্রতি ডলার বিক্রি করেছেন ১১২ টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ঋণ পরিশোধে সক্ষম বাংলাদেশ। তা ছাড়া বিদেশি ব্যাংকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ হলো একটি উত্তম মার্কেট প্লেস বা বাজার। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিলে বাস্তবায়ন করা ব্যাংকগুলোর ঋণের হার শতকরা ৯ ভাগের সীমা অপসারণ করতে বাংলাদেশকে উৎসাহিত করবে আইএমএফ। ভর্তুকি কমানো বা বাতিল করার মতো সংস্কারেরও সম্ভবত বাংলাদেশকে প্রেসক্রাইব করতে পারে আইএমএফ। সংস্থাটির সাবেক এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, যদি এই কর্মসূচি বাংলাদেশে একটি ‘হাউজ-ক্লিনিং’ কর্মসূচির সূচনা করে, তাহলে তা হবে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন।