দেশে নাগরিক অধিকার সংকুচিত হচ্ছে: আর্টিকেল নাইনটিন

দেশে নাগরিক অধিকার সংকুচিত হচ্ছে: আর্টিকেল নাইনটিন

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ধারাবাহিক অবদমন হচ্ছে বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন। পাশাপাশি নাগরিক অধিকার ক্রমাগত সংকুচিত হওয়ায় এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় তারা।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউয়ের (ইউপিআর) তৃতীয় পর্বের সুপারিশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য একটি সমন্বিত ও কার্যকর জাতীয় ব্যবস্থা তৈরির আহ্বান জানিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিন। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেতের বাংলাদেশ সফরের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে চার বছর আগে বাংলাদেশ সরকারের করা অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি তুলে ধরারও আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক আর্টিকেল নাইনটিনের বৈশ্বিক প্রতিবেদন ‘গ্লোবাল এক্সপ্রেশন রিপোর্ট ২০২২’ অনুসারে ১৬১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে ১৩১তম। সংস্থার হিসাবমতে, বাংলাদেশে কেবল ২০২১ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ৭৪০ জন সাংবাদিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ১৭৭ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ৮৯টি মামলা করা হয়েছে। এই সাংবাদিকদের মধ্যে ৫৩ জনকে বিনা বিচারে দীর্ঘদিন কারাবন্দী থাকতে হয়েছে।

আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮–এর সম্ভাব্য অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগ বিষয়ে ইউপিআরে উচ্চ মাত্রার উদ্বেগ প্রকাশ করা হলেও সরকার তখন সেটি আমলে নেয়নি। দেরিতে হলেও এই আইনের অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহারের কথা স্বীকার করে সরকার বর্তমানে একটি কমিটি করেছে বলে জানানো হয়েছে। সেই কমিটি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে সরকার সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারকে জানিয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আইনটির চিহ্নিত নিবর্তনমূলক ধারাগুলো অবিলম্বে বাতিল করার দাবি জানান হয়েছে বিবৃতিতে।

ফারুখ ফয়সল আরও বলেন, ‘ইউপিআর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ ও সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন বাংলাদেশের জন্য একটি অগ্রাধিকার ইস্যু বলে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বলে থাকেন। আবার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের মানবাধিকারবিষয়ক অঙ্গীকারের অন্যতম। অথচ এ–সংক্রান্ত ইউপিআর সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সরকার আদৌ কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে কি না, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।’

২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৩৯তম অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকার ইউপিআরের আওতায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের ১৭৮টি সুপারিশ গ্রহণ করে। যার মধ্যে অন্তত ২৫টি সুপারিশ ছিল মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা ও শক্তিশালী করা সম্পর্কিত। নিয়ম অনুযায়ী গৃহীত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে পরবর্তী পাঁচ বছর সময় পাওয়া যায়। সেই হিসাবে বাংলাদেশ সরকার তৃতীয় পর্যায়ের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের শেষ বছরে রয়েছে। ২০২৩ সালের জুনে বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সরকারকে জাতীয় প্রতিবেদন জমা দিতে হবে এবং নভেম্বরে পর্যালোচনায় অংশ নিতে হবে।