জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেতের কাছে বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় এর সমালোচনা করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশি রাষ্ট্র নয় বলেই তারা বৈঠক করতে পেরেছেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাঙালির শোকের শ্রাবণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেন মানবাধিকারকর্মীরা। তাদের প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বলেছেন, বাংলাদেশ জনগণের রাষ্ট্র নয়, পুলিশি রাষ্ট্র। আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশ যদি পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে থাকে, তাহলে এই যে আপনারা বললেন, এটা বলতে কি কেউ আপনাদের বাধা দিয়েছে? দেয়নি। মিটিং করলেন, কেউ বাধা দিয়েছে? সরকার দেয়নি। সেই বক্তব্য খবরের কাগজে ছাপালেন, আমরা কি রাতের বেলা গিয়ে খবরের কাগজকে গলা চিপে ধরেছি যে ছাপানো যাবে না? তা করা হয়নি।’ মন্ত্রী আরও বলেন, টক শোতে বিরোধী দলের লোক যা খুশি তা-ই বলেন, কিন্তু সরকার বাধা দেয় না। এটাই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, বাক্স্বাধীনতা।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন ছিল না উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার ব্যাপারে কোনো মামলা, কোনো প্রশ্ন না করার বিধান করা হয়েছিল। এটাই ছিল বাংলাদেশ। তিনি আরও বলেন, ‘এদের চিহ্নিত করতে খুব একটা সময় লাগবে না। আমরা এদের চেহারা চিনি।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জাতির পিতা মানবে না, পতাকা মানবে না, সংবিধান মানবে না, জয় বাংলা মানবে না, হাইকোর্ট লাগবে জয় বাংলা বলতে, বাংলাদেশ বেতার, রেডিও বাংলাদেশ হয়ে যাবে—এটা যতক্ষণ থাকবে বা যারা করে, তারা কি বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে?’
মন্ত্রী বলেন, একটা কমিশন হওয়া প্রয়োজন। রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। তবে এটা প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধমূলক নয়। বাংলাদেশ যেখানে পৌঁছে গেছে, সে অবস্থাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, বর্তমান প্রজন্মকে বাংলাদেশের ইতিহাস সঠিকভাবে জানাতে হবে।
আনিসুল হক বলেন, আইয়ুব খানের মন্ত্রিসভার অনেককেই জিয়াউর রহমান নিজের মন্ত্রিসভায় বসিয়েছিলেন। তিনি এই হত্যাকাণ্ডগুলো করার পরে দেশ শাসন শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হওয়ার পর এদের চিহ্নিত না করলে এই শত্রুদের নিজেদের লালন-পালন করার সুযোগ দেওয়া হয়ে যাবে।
সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত এ কে এম আতিকুর রহমান।