বর্ষা মৌসুমের আগেই জলাবদ্ধতা, নগরবাসীর ভোগান্তি

বর্ষা মৌসুমের আগেই জলাবদ্ধতা, নগরবাসীর ভোগান্তি

ঢাকা, ২৯ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই রাজধানীর বিভিন্নস্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সারাদেশে রবিবার কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কোথায় হাটু পানি আবার কোথাও কোমর সমান পানি জমে যায়। অনেক সড়কে গাছ উপড়ে পড়ে। ফলে সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে অনেকে ভোগান্তিতে পড়েন। বুদ্ধ পূর্ণিমার ছুটির দিনেও অনেক সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের খোঁড়াখুড়ি চলার কারণে চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হয় নগরবাসী।

রবিবার সকালে আকাশ কালো করে রাজধানীতে ধেয়ে আসে কালবৈশাখী। আবহাওয়া অফিস বলছে, ঝড়ের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৩ কিলোমিটার। সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ঢাকায়। এরপর বেলা ১১টার দিকে আবারো আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। শুরু হয় ঝমঝম বৃষ্টি। একটানা দেড় ঘন্টা ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়। পরে সন্ধ্যার দিকেও আরেক দফা বৃষ্টি নামে রাজধানীতে।

সকালে মিরপুর ১০ নম্বর এলাকার চারদিকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফায়ার সার্ভিস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকার রাস্তায় পানি জমে যায় প্রায় কোমর সমান। ১০ নম্বর গোল চত্বর ছাড়াও কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়ার রাস্তায়ও হাঁটু পানি জমে যায়।

পানির কারণে ফুটপাত দিয়ে হাঁটাও কষ্টকর হয়ে পড়ে। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ১৩ নম্বর পর্যন্ত সড়কের দুপাশে, ১৪ নম্বর সেকশন, ইব্রাহিমপুর, কচুক্ষেত এলাকার বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়। মিরপুরে মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে সড়কে গাড়ি চলার জায়গায় এমনিতেই কমে গেছে। তার মধ্যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ১০ নম্বর থেকে ফার্মগেটমুখী সড়কে দেখা যায় ব্যাপক যানজট।

অনেক গাড়িকে মিরপুর ১ নম্বর ঘুরে ফার্মগেটের দিকে যেতে দেখা যায়। পশ্চিম রাজারবাজার, ইন্দিরা রোডের বিভিন্ন সড়কে দেখা যায় নিষ্কাশন নালা থেকে উপচে ময়লা পানিতে রাস্তা সয়লাব হয়ে আছে। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার পূর্বপাশের রাস্তা, জিয়া উদ্যানের মুখে এবং জাহাঙ্গীর গেট এলাকার সড়কের এক প্রান্তেও জলাবদ্ধতা দেখা যায়। দুপুরের দিকে ফার্মগেট থেকে কারওয়ান বাজারে যাওয়ার সড়কেও বিভিন্ন অংশে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। ওই সময় পানি ছিল শুক্রাবাদ এলাকাতেও।

এছাড়া, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পলাশীমুখী সড়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়ামের সামনের সড়ক, তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে মহাখালীগামী সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে ছিল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। নাবিস্কো এলাকায় পানির কারণে যান চলাচলের জায়গা কমে আসায় সৃষ্টি হয় যানজট।

এদিকে বিমানবন্দর সড়কের মহাখালী ফ্লাইওভারের মুখে, বনানী কবরস্থান, আর্মি স্টেডিয়ামের সামনের সড়কের একটা অংশে পানি জমে থাকতে দেখা যায় দুপুর পর্যন্ত। এছাড়া আরামবাগ থেকে ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে দৈনিক বাংলা সড়ক, রাজারবাগ সড়ক, ধানমন্ডির ২৭ নম্বর, চাঁনখারপুল, হাজারিবাগ ও গুলিস্তান এলাকায় পানি জমে যায়। মালিবাগে চৌধুরীপাড়ার বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়। আবুল হোটেলের সামনে থেকে খিলগাঁও কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত সড়কে খোঁড়াখুড়ি চলছে। এ কারণে কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে।

সকালের বৃষ্টিতে চাঁনখারপুল, বকশিবাজার, নাজিম উদ্দিন রোড, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ভেতরের পুরো এলাকা, ঢামেক ক্যাম্পাস, আজিমপুরের বিভিন্ন এলাকায় হাঁটু পানি জমে গেছে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকেও জলাবদ্ধতা দেখেছি। পানির কারণে ঢামেক এলাকায় রোগীর স্বজনদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন বা ঢাকা ওয়াসার কোনো কর্মীদের দেখিনি।

হাজারীবাগে দুপুর পর্যন্ত সেখানকার বিভিন্ন সড়কে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। কয়েকটি বাড়ির নিচতলায়ও পানি উঠেছে। সিটি করপোরেশনের ড্রেনগুলোতে ময়লা আর আবর্জনায় ভরা। এ কারণে যথাযথভা পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না।

জলাবদ্ধতার কারণে ব্যাহত হয় যানবাহন চলাচলও। অনেক স্থানে বিকল হয়ে পড়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেটকারসহ যানবাহন। পানির মধ্যে গর্তে পড়ে রিকশা উল্টে যেতে দেখা যায় বিভিন্ন এলাকায়। সরকারি ছুটির দিন অনেক সড়কে যানবাহনের চাপ কম থাকলেও সেখানে জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে নগরবাসীকে।

এছাড়া বর্তমানে ড্রেন নির্মানে বিভিন্ন সড়কে খোঁড়াখুড়ি চলছে। এ কারণে ওইসব সড়কে চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হয় নগরবাসী। বিশেষ করে বাসাবো থেকে নন্দীপাড়া সড়কে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। মুগদা সড়কের কাদাপানির কারণে ভোগান্তির শিকার হয় পথচারী ও যাত্রীরা। এ সড়কটি দীর্ঘদিন থেকেই ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে গেছে। সড়কে অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতি বছর শত কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। এ বছর সড়ক, ফুটপাত ও সারফেস ড্র্রেন নির্মাণে ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরেছে ডিএসসিসি। ইতোমধ্যে প্রায় সব টাকা খরচ করেছে এই সংস্থা। কিন্তু আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না নগরবাসী। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসাও নিজস্ব ড্রেন পরিষ্কারের পেছনে ব্যয় করে বড় অংকের টাকা। কিন্তু পরিস্থিতির কোনও উন্নয়ন হয় না।

নগরবাসীর অভিযোগ, সামান্য বৃষ্টিতেই পানি থই থই করে ঢাকার রাজপথ থেকে অলিগলি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ আর আশ্বাসের কথা শোনা গেলেও বাস্তবে কোনো সমাধান আসেনি। শুধু ড্রেন পরিষ্কার আর নদী ও খাল দখলমুক্ত করার পরামর্শ ছাড়া কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। এ কারণে আসন্ন বর্ষা মৌসুমেও রাজধানীজুড়ে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা তাদের। এ নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০৪৬ঘ.)