পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি: ইউনিলিভার, সিটি গ্রুপসহ ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা

পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি: ইউনিলিভার, সিটি গ্রুপসহ ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা

বাজারে চাল, আটা–ময়দা, ডিম, মুরগির মাংস ও টয়লেট্রিজ পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে অস্থিরতা তৈরির অভিযোগে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।

বৃহস্পতিবার কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চালের জন্য রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টস, বেলকন গ্রুপ, সিটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড; আটা-ময়দার জন্য সিটি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ; ডিমের জন্য প্যারাগন পোলট্রি, ডিম ব্যবসায়ী-আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানউল্লাহ্, কাজী ফার্মস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল ইসলাম; মুরগির জন্য কাজী ফার্মস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল ইসলাম, প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেড; টয়লেট্রিজ পণ্যের জন্য ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক—মোট ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, যদিও একই প্রতিষ্ঠানের নাম এ তালিকায় একাধিকবার এসেছে।

প্রতিযোগিতা কমিশনের সচিব মো. আবদুস সবুর প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন অভিযোগে চাল, আটা, মুরগির মাংস, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকারী ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিলিভার বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স ও পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশনস বিভাগের পরিচালক শামীমা আক্তার বলেন, ‘আমরা এখনো নোটিশটি হাতে পাইনি। তাই কী পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে আমরা দেশের সব ধরনের আইন মেনে এ দেশে ব্যবসা পরিচালনা করছি। সরকারকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।’

চলতি মাসের ২৬ তারিখ থেকে কোম্পানিগুলোকে ধারাবাহিকভাবে শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতিযোগিতা কমিশন আইনের ১৫ ও ১৬ ধারা অনুযায়ী এ মামলা হয়েছে। ধারা ১৫–তে বলা হয়েছে, বাজারে প্রভাব বিস্তার করে একপক্ষীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তারা শাস্তির আওতায় আসবে। আর ধারা ১৬–তে বলা হয়েছে, কোনো পণ্যের বাজারজাত বা উৎপাদনে শীর্ষে থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পণ্যের দামে কারসাজি করলে সেই অপরাধও শাস্তিযোগ্য।

কয়েক মাস ধরে দেশে চাল, তেল, আটা, ডিম, মুরগি, সাবান, ডিটারজেন্ট ও টুথপেস্টের বাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার তদারকির পাশাপাশি এসব পণ্যের উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে সভা করেছে, যেখানে অস্বাভাবিকভাবে মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ ওঠে।
এদিকে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, যারা বাজারে অস্থিরতা তৈরির জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভোক্তা অধিদপ্তর ডিমের বাজারে কারসাজিতে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদনও পাঠিয়েছে।

এদিকে কয়েক মাস ধরে বাজারে চালের দাম বেশি। মাসখানেক আগে মোটা চালের দাম উঠেছিল প্রতি কেজি ৫৫ টাকার ওপরে। একইভাবে চিকন চালের দাম উঠেছিল প্রতি কেজি ৮৫ টাকা পর্যন্ত। বাজারে অভিযান শুরু ও চাল আমদানির কারণে তা আবার কমতে শুরু করেছে।

একইভাবে মাসখানেক আগে ডিমের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। তখন ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ২০০ টাকার ওপরে ওঠে। অভিযানের কারণে ডিম ও মুরগির দাম মাঝে কিছুদিন কম থাকলেও এখন আবার বেড়েছে—ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যান্য নিত্যপণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডলারের বাড়তি দাম ও কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাত দিলেও সরকারি-বেসরকারি একাধিক মতবিনিময় সভায় মূল্য যতটা বৃদ্ধির কথা, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে বলে মত দিয়েছেন অনেকে।