বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা চায় যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা চায় যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোম্পানি বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে ব্যবসা প্রসারিত করতে চায়। কিন্তু তারা বিনিয়োগের আগে দেশে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ আছে কি না, তা জানতে চায়। পাশাপাশি শ্রমের মানোন্নয়ন, পরিবেশ, গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, সহনশীলতা, সুশাসন ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়েও এই বিনিয়োগকারীরা চিন্তিত। তাই দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে নীতিনির্ধারকদের এসব বিষয় নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।

মঙ্গলবার ঢাকায় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পিটার হাস এসব কথা বলেন।

আইবিএফবির সভাপতি হুমায়ুন রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকারী। পাশাপাশি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্যও যুক্তরাষ্ট্র। তাই দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

অনেক মার্কিন কোম্পানি এ অঞ্চলে ব্যবসা প্রসারিত করতে চায় জানিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশকে একটি ভালো ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করে যাচ্ছি। খুব শিগগির ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের পূর্ণকালীন অ্যাটাশে স্থাপন করা হবে।’ এতে দুই দেশের ব্যবসার ক্ষেত্রে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন পিটার হাস।

পিটার হাস জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্‌যাপিত হচ্ছে। এ সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র পাঁচটি বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায়, যেখানে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা, বহুত্ববাদ, সহনশীলতা, সুশাসন ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল পরিবেশ থাকতে হবে। এর সঙ্গে সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে সহনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে পিটার হাস বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র। যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন সম্ভব না হয়, ততক্ষণ এ সমর্থন থাকবে।

একই সঙ্গে টেকসই উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন, শ্রমের মানোন্নয়ন, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রসারিত করা ও বৈচিত্র্য আনা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিসর বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করছে বলে জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

পিটার হাস বলেন, সংগঠন হিসেবে আইবিএফবি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অর্থনৈতিক শাসনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। এসব কাজে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আছে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইবিএফবির সাবেক সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, হাফিজুর রহমান খান, সহসভাপতি এম এস সিদ্দিকী, আইবিএফবি চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব প্রমুখ।