কচুপাতা ও কলাপাতা হাতে শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ

কচুপাতা ও কলাপাতা হাতে শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ

কাগজসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে কচুপাতা ও কলাপাতা হাতে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা–কর্মীরা। শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করে সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, আগামী জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা নতুন বই না পেলে সরকারের পতনের আন্দোলনে নামবেন তাঁরা।

সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্র ইউনিয়নের এই সমাবেশ হয়। সেখানে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল বলেন, খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনোরকমে দুই বেলা খেয়ে বেঁচে আছেন। এখন আবার খাতা-কাগজসহ শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ল। কাগজের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘গত ৪-৫ মাসে কাগজের দাম টনপ্রতি ৩৫-৩৭ হাজার টাকা বেড়েছে। আজ বাজারে কাগজ খুঁজে পাওয়া যায় না। এর জন্য কাগজ ব্যবসায়ীরা মিলমালিকদের দায়ী করছেন, মিলমালিকেরা দায়ী করছেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে। কোন দেশে বাস করছি! কাগজের অভাবে যেন প্রকাশকেরা বই প্রকাশ বন্ধ বা বইমেলা বন্ধ হয়ে না যায়।’

বাণিজ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে দীপক শীল বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দায়িত্ব হস্তান্তর করুন, আমরা দায়িত্ব নেব। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে আনব এবং সিন্ডিকেট চক্রকে দেশ থেকে বিতাড়িত করব। বাণিজ্যমন্ত্রীর সৎসাহস থাকলে দায়িত্ব হস্তান্তর করুন।’

সাশ্রয়ী দামে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ পাওয়া নিশ্চিত করার দাবি জানান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘আমরা কলাপাতায় লিখব না, আদিম যুগের মতো তালপাতায়ও লিখব না। আমরা খাতা-কলমেই লিখব। আমরা আগে দুমুঠো খেয়ে-পরে বাঁচা ও মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের নিশ্চয়তা চাই। কিন্তু সেই উপায় আর নেই। আমরা বলতে চাই, শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ যে আন্দোলনের সূচনা হলো, এই আন্দোলন প্রয়োজনে আমরা সরকার পতনের আন্দোলনে নিয়ে যেতে বাধ্য হব। কারণ, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।’

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু বলেন, যে সময়ে করোনাকালে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনার কথা ছিল, সেই সময়ে শাসনের নামে শোষণ করা এই সরকার দিন দিন শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়াচ্ছে৷ যখন আরও বেশি শিক্ষার্থীকে শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আরও প্রণোদনা দেওয়ার কথা ছিল, তখন খাতা-কলম কেনার সামর্থ্যটুকুও এই সরকার কেড়ে নিচ্ছে। সব শিক্ষাসামগ্রীর দাম ১০-১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে৷ এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন ও অন্যান্য ফি কয়েক গুণ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে খেটে খাওয়া মানুষের সন্তানদের লেখাপড়ার অধিকার কীভাবে নিশ্চিত হবে? কোটি কোটি টাকা খরচ করে গবাদিপশু-মৎস্য পালন শিখতে তাঁরা বিদেশে যান, কিন্তু শিক্ষা খাতে টাকা দেওয়া যায় না! শিক্ষামন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ, শিক্ষাব্যবস্থাকে তাঁরা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।

ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কাজী রাকিব হোসাইন বলেন, এক-দেড় মাস ধরে কাগজের দাম বাড়ছে। গত দুই সপ্তাহের মধ্যে কাগজের দাম প্রায় দেড় গুণ বেড়েছে৷ এর ফলে বইয়ের দাম বাড়ছে। ইতিমধ্যে একটি প্রকাশনী আগামী বইমেলায় নতুন কোনো বই প্রকাশ না করার ঘোষণা দিয়েছে। খাতা-কলমসহ প্রতিটা শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে খাবারের দাম বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া কষ্টকর হয়ে উঠছে।

ছাত্র ইউনিয়নের (ফয়েজ উল্লাহ-দীপক শীল) কেন্দ্রীয় সহকারী সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শাওন বিশ্বাস ও ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক লাভলী হক।