এবার ডলার সংকটে বিদেশে উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশীরাও

এবার ডলার সংকটে বিদেশে উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশীরাও

দেশে ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা প্রত্যাশীদের ওপরও। বিদেশে পড়ার জন্য খরচ বাবদ ডলার নিতে হলে দেশের অথোরাইজড ডিলার ব্যাংকে (এডি) ফাইল খোলা লাগে।

যার মাধ্যমে ডলার পাঠানো হয়। দেশে ডলার সংকটের কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিদেশে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন করে ফাইল খুলছে না। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল স্ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ডলার সংকটের কারণে স্টুডেট ফাইল খোলা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বিদেশগামী একজন শিক্ষার্থী ২০-৩০ হাজার ডলার পর্যন্ত বিদেশ পাঠান। পাঁচজন ছাত্রের টিউশন ফি পাঠানো হলে সেটির পরিমাণ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কোনো ব্যাংকের জন্য ১ লাখ ডলার অনেক মূল্যবান। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই আপাতত বিদেশগামী শিক্ষার্থীদের ফাইল খোলা বন্ধ রেখেছি।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ব্র্যাক, দ্য সিটি, ইস্টার্ন, ব্যাংক এশিয়া, সাউথইস্ট, প্রাইম ও প্রিমিয়ার ব্যাংক হ ১২ থেকে ১৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বিদেশে শিক্ষাপ্রত্যাশীর নতুন ফাইল খুলে থাকে। ডলার সংকটে পড়ায় এসব ব্যাংক জরুরি আমদানি কাজের জন্য এলসি খোলার মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল, খাদ্য ও জ্বালানির মতো জরুরি পণ্য আমদানিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তারা।

অভিযোগ আছে, তুলনামূলক ছোট্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জরুরি কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্র আমদানিতেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ডলার সাশ্রয়ের জন্যই এ পথ অনুসরণ করছে ব্যাংকগুলো। আর এ খড়গ পড়েছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশীদের ওপর।

এ বিষয়ে সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বলেন, একটি ফাইল খুললে তিন-পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে নিয়মিত ডলার পাঠাতে হয়। দেশে এখন ডলারের তীব্র সংকট চলছে। এ কারণে আমরা আপাতত নতুন ফাইল খোলা বন্ধ রেখেছি। পুরনো খোলা ফাইলগুলোই সচল রাখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যান। বিদেশে শিক্ষার জন্য গিয়ে এই বিপুল সংখ্যক ছাত্রের বড় অংশই (শুধু ভারত ছাড়া) সেখানেই থেকে যান। যারা আমাদের প্রবাসী আয়ের অন্যতম বড় গর্বিত অংশীজন।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪৯ হাজার ১৫১ জন বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গেছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য গেছেন ৮ হাজার ৬৬৫ জন, মালয়েশিয়ায় ৭ হাজার ৫৪৮ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৫ হাজার ৬৪৭ জন, কানাডায় ৫ হাজার ১৩৬ জন, জার্মানিতে ৩ হাজার ৯৩০ জন, যুক্তরাজ্যে ৩ হাজার ১৯৪ জন, ভারতে ২ হাজার ৭৫০ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১ হাজার ১৭৬ জন এবং সৌদি আরবে ১ হাজার ১৬৮জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা ব্যাহত হলে দক্ষ মানব সম্পদ গঠনের যে প্রক্রিয়া চলমান আছে, তাও ব্যাহত হতে পারে। এতে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকার পাচার বাড়বে। কারণ কোনো শিক্ষার্থী বিদেশে ভর্তির সুযোগ পেলে যে কোনভাবেই হোক সে বিদেশে যাবে। দেশ থেকে অর্থও যাবে, কিন্তু তা যাবে অবৈধভাবে।