কক্সবাজারের আত্মস্বীকৃত ১০১ ইয়াবা কারবারির দেড় বছর করে কারাদণ্ড, অস্ত্র মামলায় খালাস

কক্সবাজারের আত্মস্বীকৃত ১০১ ইয়াবা কারবারির দেড় বছর করে কারাদণ্ড, অস্ত্র মামলায় খালাস

টেকনাফে আত্মসমর্পণ করা ১০১ জন ইয়াবা কারবারির প্রত্যেককে ১ বছর ৬ মাস করে কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে অস্ত্র মামলায় ১০১ জনের সবাইকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

বুধবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এই রায় ঘোষণা করেন।রায় ঘোষণার আগে আসামিরা কাঠগড়ায় বসা ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাঁরা দাড়িয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, টেকনাফে প্রথম দফায় আত্মসমর্পণ করা ১০১ জন ইয়াবা কারবারির বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী এই দুইটি দায়ের করে। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।

ফরিদুল আলম জানান, রায়ের জন্য কারাগারে থাকা আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। তাদের উপস্থিতিতে মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

এদিকে মামলাগুলোর ১৮ আসামি কারাগারে থাকলেও পলাতক আছেন বাকি ৮৩ জন। এদের মধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও রয়েছেন।

প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় আছেন- সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির চার ভাই (আব্দুল আমিন, আব্দুর শুক্কুর, শফিকুল ইসলাম, ফয়সাল রহমান), ভাগিনা সাহেদ রহমান নিপু, চাচাতো ভাই মোহাম্মদ আলম। আরও আছেন- টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ ও তার বড় ভাই আব্দুর রহমান, বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদের ছেলে দিদার মিয়া, টেকনাফ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল বশর নুরশাদ, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের এনামুল হক এনাম মেম্বার, কক্সবাজার শহরের ইয়াবা ডন খ্যাত শাহাজাহান আনসারীসহ অনেকে।

এদিকে আত্মসমর্পণ করা আসামিদের মধ্যে যাদের জামিন বাতিল করা হয়েছে তাদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় টেকনাফ থানার ওসি আবদুল হালিমের কাছে। তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত আদালতের কোনো আদেশ হাতে আসেনি। আদালতের আদেশ পেলে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। যদিও মামলাগুলোর সর্বশেষ শুনানির দিন অনুপস্থিত থাকায় আদালত ৮৪ জনের জামিন বাতিল করেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ একদল ইয়াবা কারবারি অবস্থান নেওয়ার খবরে অভিযান চালায় পুলিশ। ওই সময় পুলিশের কাছে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে তারা আত্মসমর্পণ করেন।

ওইদিনই তাদের আসামি করে টেকনাফ মডেল থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়। থানার তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) শরীফ ইবনে আলম বাদী হয়ে মামলাগুলো করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় পরিদর্শক এবিএমএস দোহাকে। মামলা দায়েরের দিনই আদালতের মাধ্যমে আসামিদের গ্রেফতার দেখিয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট মোহাম্মদ রাসেল নামে এক আসামি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর পর ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহ-এর আদালতে ১০১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে মামলাটি বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। একই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল সব আসামির উপস্থিতিতে শুনানি শেষে মামলার চার্জ গঠন করেন। গত ১৫ নভেম্বর শুনানি শেষে মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজ বুধবার ২৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।