খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি মঙ্গলবার

খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি মঙ্গলবার

ঢাকা, ৭ মে (জাস্ট নিউজ): সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৮ মে (মঙ্গলবার) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। জামিন আবেদনের শুনানির জন্য পূর্ণ প্রস্তুত তার আইনজীবীরা। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মামলার বিভিন্ন দিক ও আইনের দিক বিশ্লেষণ করে এবং নথি পর্যালোচনা করে বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেবেন বলে মনে করেন তার আইনজীবীরা। তবে তারা বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে একের পর এক অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখাতে পারে। অবশ্য সরকার এ রকম অশুভ তৎপরতায় লিপ্ত হলে এবং বেগম জিয়াকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করা হয় তা কখনো সফল হবে না।

বেগম খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালতের দেয়া পাঁচ বছর সাজার রায় হাইকোর্ট উভয় পক্ষের শুনানি গ্রহণ করে নথি পর্যালোচনা করে জামিন দেন। কিন্তু আপিল বিভাগ তা স্থগিত করেন। যেহেতু রাজনৈতিক মামলা তাই তারা নথি পর্যালোচনা করে দেখবেন কোনো আত্মসাৎ হয়েছে কি না। আপিল বিভাগ এ মামলার শুনানি করার পর আমরা আশা করি বেগম খালেদা জিয়া জামিন পাবেন। তবে তার জামিন পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে একের পর এক অন্য মামলায় অ্যারেস্ট দেখানো হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। যদি সরকার এই অশুভ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয় এবং বেগম জিয়াকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করা হয়, তা হলে তা সফল হবে না। বরং বেগম জিয়ার নির্দেশে নেতাকর্মীরা যে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করত তা হয়তোবা সম্ভব হবে না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে অত্যাচার করা হলে দেশে অন্যরকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আমরা আশা করব দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় সরকার এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে মাইনাস ওয়ান থিউরি বাস্তবায়ন করা এবং রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, সরকার পক্ষ থেকে বলা হয় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের সময় করা হয়েছে। তাই এখানে বর্তমান সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু তারা ভুলে গেছে, ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের আমলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা করা হয়েছিল। তখন দুই নেত্রীকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিদায় করার জন্য এসব মামলা করা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের নামে সব মামলা প্রত্যাহার করা হয়।

অথচ বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়। অতএব, এ মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যবিহীন এটা বলা যাবে না। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আমরা দেখেছি কুয়েতের আমির জিয়াউর রহমানের একজন কাছের ও প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি এই টাকাটি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে পাঠান। তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রাহমানের মাধ্যমে এই টাকা আনা হয়। কুয়েতের আমিরের পাঠানো প্রায় চার কোটি টাকার মধ্যে দুই কোটি টাকা দিয়ে মোস্তাফিজুর রাহমান বাগেরহাটে শহীদ জিয়াউর রহমানের নামে এতিমখানা করেন। আর বাকি প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়ে তারেক রহমান এই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট করেন। অথচ বাগেরহাটের ট্রাস্ট নিয়ে কোনো মামলা করা হয়নি। আমরা মনে করি টাকা দেয়া অপরাধ হলে উভয় ক্ষেত্রে হবে। কিন্তু যে মুহূর্তে অর্থ ট্রাস্টে চলে গেছে তার পর খালেদা জিয়ার ভূমিকা ছিল না।

বেগম জিয়া এতে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তার কোন প্রমাণ রাষ্ট্রপক্ষ দেখাতে পারেনি। যে মুহূর্তে এই টাকা ট্রাস্টে হস্তান্তর করা হয়েছে তারপর এর দায়দায়িত্ব ট্রাস্টের। তারপর ট্রাস্টি বোর্ডের নিয়মকানুন মেনে রেজুলেশন করা হয়। এই ট্রাস্টের কোনো অর্থ আত্মসাৎ করা হয়নি। বরং দীর্ঘ দিন ব্যাংকে থেকে ওই টাকা দুই কোটি থেকে ৬ কোটি টাকা হয়েছে। এটা দালিলিকভাবে প্রমাণিত। আত্মসাৎ না হলে কোনো মামলাই হয় না। এই মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এখানে তার কোনো ভূমিকা নেই।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এই মামলায় খালেদা জিয়াকে আত্মসাতের সহযোগিতা করার অভিযোগে পাঁচ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। কিন্তু রায়ে কিভাবে কাকে সহযোগিতা করা হয়ে ছিল তা বলা হয়নি। তার মানে এই মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য তার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে।

আর আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের হতে না দিয়ে নির্বাচনের আগে তাকে কারাগারে রেখে একতরফা নির্বাচনের প্রচেষ্টা চালালে দেশের মানুষ তা মেনে নেবে না। তিনি বলেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে দেশে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে।

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এ মামলায় বেগম জিয়ার জামিন হলেও সরকার তখন একের পর এক অন্য মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখাতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্দ হবে। তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাবে। এতে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি আছে ৮ মে জামিন আবেদনের শুনানির জন্য। আমরা মনে করি দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মামলার বিভিন্ন দিক ও আইনের দিক বিশ্লেষণ করে তাকে জামিন দেবেন।

তিনি বলেন, আমাদের উপমাহাদেশে এমন একটিও উদহারণ নেই যেখানে, হাইকোর্ট জামিন দেয়ার পর সর্বোচ্চ আদালত তা নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, অনেক সময় হাইকোর্ট জামিন দেননি, কিন্তু আপিল বিভাগ জামিন দিয়েছেন। বেগম জিয়া এখন জেলে আছেন। শনিবার আমরা আইনজীবীরা তার সাথে দেখা করেছি।

জয়নুল আবেদীন বলেন, সরকার চাইতে পারে রাজনৈতিক কারণে তাকে জেলে রাখতে তবে সরকার যাই চাক আদালত এটা করবে না। সরকারের ইচ্ছে পূরণ করার জন্য সরকার চাচ্ছে নির্বাচনের আগে তিনি জেল থেকে বের হতে না পারেন। কিন্তু আদালত সরকারের সে ইচ্ছা পূরণ করলে দেশের মানুষের বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা থাকবে না, আইনের শাসন বলে কিছুই থাকবে না। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে অন্যান্য মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ওই সব মামলা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা আশা করি আপিল বিভাগে তিনি জামিন পেলে ওই সব মামলায় খুব একটা সমস্যা হবে না।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, সরকার দুদককে (দুর্নীতি দমন কমিশন) ব্যবহার করে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলা করেছে। সেই মামলায় তিনি বর্তমানে জেলে আছেন। তিনি দেশের সর্বোচ্চ জনপ্রিয় নেত্রী। তিনি অসুস্থ। শনিবার আমরা পাঁচ আইনজীবী তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমরা জেনে এসেছি তিনি খুবই অসুস্থ, বাম হাত অবস হয়ে গেছে, পায়ে ব্যথ্যা। আমরা তার উন্নত চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট এবং নিম্ন আদালত, সব আদালতের বিচারকেরা সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার আতঙ্কে ভুগছেন। আইনগতভাবে কোনো তথ্য না থাকার পরও দুদককে ব্যবহার করে এ মামলায় তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। বেগম জিয়াকে জেলে রেখে কোনো নির্বাচন দিলে জাতীয়তাবাদি শক্তি তা মেনে নেবে না। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। হাইকোর্ট তাকে জামিন দিয়েছেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে জামিন দেয়া হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ, আদালতে সে কথা বলার জন্য তিনি আমাদের বলেছেন আমরা তা বলব। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে তা সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা। কুমিল্লার দুই মামলায় অন্য আসামিরা জামিনে আছেন। আশা করি এ মামলায়ও তিনি জামিন পাবেন।

গত ১৯ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ। একই সাথে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপকে আপিলের অনুমতি দেন আদালত।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পরপরই বেগম খালেদা জিয়াকে আদালত থেকে গ্রেফতার করে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখন কারাগারে আছেন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০৩৩ঘ)